রাকিব শান্ত, উত্তরবঙ্গ ব্যুরো প্রধানঃ কম্বলের দাপটে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে লেপ। পূর্বের চেয়ে বর্তমানে তুলনামূলকভাবে শীতকম পড়ায় কম্বলের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে লেপের চাহিদা একেবারেই কমে গেছে।
থানা মোড়ের লেপ ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, লেপ রাখতে অনেকখানি জায়গার প্রয়োজন পড়ে৷ কম্বল অল্প জায়গায় রাখা যায়। যার ফলে মানুষ ঝামেলা মনে করে লেপের পরিবর্তে কম্বল ব্যবহার করছে। পাশাপাশি শীতের তীব্রতা কমে যাওয়াও আরেকটি কারণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে অন্যান্যবছরের তুলনায় এ বছর শীত একটু বেশি পড়ায় এবার লেপের চাহিদা একটু বেড়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় লেপ তৈরিতে মূলত এইচবিআরটি তুলা ব্যবহৃত হতো৷ কিন্তু বর্তমানে এইচবিআরটি তুলা সুতার মিলে চলে যায়। যার ফলে এখন সিন্থেটিক তুলা বাজারে জায়গা করে নিয়েছে। এর ফলস্বরূপ এইচবিআরটি তুলা এখন খুব কম পাওয়া যায়। দক্ষিণ অঞ্চলের কিছু কিছু জায়গায় ও চট্টগ্রামের কিছু কিছু জায়গায় তোলা পাওয়া গেলেও ঢাকা ও উত্তরবঙ্গে এইচবিআরটি তুলা নাই বললেই চলে।
লেপ তৈরির কৌশল ও কাঁচামালে পরিবর্তণ এসেছে। যার ফলে এখনকার লেপ আগের মতো আরামদায়ক হয় না। বর্তমানের সিন্থেটিক তুলা ৬/৭ কেজি দিলেও তা আড়াই বা তিন কেজি সমান হয় না। এখনকার এসব তুলা হচ্ছে গার্মেন্টসের কাপড় কাটা তুলা। এখনকার তুলা থেকে ধুলি পরিষ্কার করতে লাঠি দিয়ে বাড়ি দিলেই চলে। আগের মতো আর হাতের কাজ করতে হয় না।
সার্বিকভাবে লক্ষ্য করলে দেখা যায় অল্প কিছু মানুষের কারণে এখনো শহরে লেপের ঐতিহ্য টিকে আছে। লেপের যে উষ্ণতা তা কিন্তু কম্বলে কখনোই পাওয়া যায় না। যারা সব সময় লেপ ব্যবহার করে তারা কখনোই কম্বল ব্যবহার করে না। লেপের যে আরাম ও উষ্ণতা তা কম বলে পায়না। কম্বলের ফাঁক দিয়ে বাতাসও ঢোকে।
বর্তমান প্রযুক্তির দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে লেপ তোষকের পুরনো কারিগরেরা। আগেকার সেই পুরনো কারিগরেরা এখন আর নেই। বর্তমানে পুরনো কারিগর খুব কমই আছে। ভবিষ্যতে সবকিছু মেশিনের দখলে চলে যাবে। হাতের সেলাইয়ের আর প্রয়োজন পড়বে না। যার ফলে কারিগরেরও প্রয়োজন পড়বে না। ধীরে ধীরে লেপ-তোষক আর চলবে না। সব বন্ধ হয়ে যাবে। তার সাথে সাথে বিলীন হয়ে যাবে ঐতিহ্যবাহী একটি পেশাদার সম্প্রদায়।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আগে প্রতি মাসে ১৫/২০ টি জাজিমের অর্ডার থাকতো। এখন মাসে ৪/৫ টার অর্ডার পাওয়ায় কঠিন। তাই অনেকেই বাধ্য হয়ে পেশা বা ব্যবসা পরিবর্তন করছে। অতী দ্রুত এই পেশার মানুষগুলো হারিয়ে যেতে বসেছে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, লেপ তুলনামূলকভাবে কম্বলের চেয়ে স্বাস্থ্যকর। বিশেষভাবে, যাদের শ্বাসকষ্ট রয়েছে তাদের কম্বল ব্যবহার করা উচিৎ নয়। অনেক ডাক্তারেরা কম্বলের তুলনায় লেপ সাজেস্ট করে।