বনানী (ঢাকা) প্রতিনিধিঃ গত ১৭ আগষ্ট এশার নামাজের সময় রাজধানীর কড়াইল বস্তির নূরানী মসজিদের ভেতরে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা আলামিনকে। এই ঘটনায় মারাত্মক আহত হয় তাঁর ভাইসহ আরও কয়েকজন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান ওইদিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুর নেতৃত্বে ভাইগ্না আলী, মোহাম্মদ আলী, কবির, আজিজুল, খাজা, আমজাদ গং হামলা চালায়। এসময় তারা একাধিক ঘর এবং দোকানও ভাঙচুর করে।
আলামিন হত্যার ঘটনায় বনানী থানায় ২২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আলামিনের মেজো ভাই মো. জুয়েল সরকার। মামলার আসামিরা হলেন- মো. নুর আলম নুরু (৩৮), মোহাম্মদ আলী (৫৫), মো. খাজা (৪৫), মো. আমজাদ (৩০), মো. রাসেল (৩৫), মো. মাহাবুর আলম (২১), মো. কবির (৩৮), মো. মাসুদ রানা (১৯), মো. আলী হোসেন (২৭), মো. আজিজুল (৩২), মো. সেন্টু মৃধা (৫০), মো. শফিকুল ইসলাম রাজু (৪০), মো. মাহবুব আলম (৩৫), মো. তানভীর (২০), মো. মামুন (২০), মো. সাব্বির (১৯), মো. মেহেদী (১৯), মো. ইলিয়াস আহমেদ (২২), মো. শহিদুল (৩৫), স্বাধীন (১৯), মো. নাজির (৪০) ও কাউসার (৫৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের আসামি করা হয়েছে।
এরই মধ্যে আলামিন হত্যায় জড়িত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোহাম্মদ আলী, মো. খাজা, মো. আমজাদ হোসেন, মো. হুমায়ুন কবির রাসেল (৩৪) এবং মাসুদ আলম। ডিএমপির গুলশান বিভাগ তাদের কাছ থেকে বড় ছোরা, চাপাতি ও ডিস্ক কুড়াল, লোহার রডসহ দেশি অস্ত্র জব্দ করে।
এদিকে আলামিন হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে মো. হুমায়ুন কবির রাসেল (৩৪) নির্দোষ বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। রাসেলের পরিবার দাবি করেছে, নির্বাচনের সময় স্থানীয় কাউন্সিলর মফিজুরের সমর্থন না করায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রাসেলের নাম এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। এছাড়া রাসেলের পরিবার বলেছে, ‘এলাকার কেউ বলতে পারবে না রাসেল কোনোদিন কোনো ধরনের মারামারি বা ঝামেলার সাথে জড়িত ছিল। গত ১৭ আগষ্ট সংঘর্ষস্থলে রাসেলকে কেউ দেখেছে এই কথাও বলতে পারবে না। সেদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় রাসেলের এক আপন খালাতো ভাই আহত হয়েছিল, তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়াটাই ছিল রাসেলের অপরাধ।’
আলামিন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, সেদিনের ঘটনায় রাসেল জড়িত ছিল না। তাঁকে সেখানে কেউ দেখে নি।
মাসুদ আলম নীরব নামে এক ব্যক্তি বলেন, ‘সঠিক তদন্তের মাধ্যমে রাসেলকে মুক্তি দেওয়া হোক। রাসেল ষড়যন্ত্রের শিকার।’
মোবারক হোসেন বেপারী নামক একজন বলেন, ‘রাসেলের প্রতি চরম অন্যায় করা হয়েছে। এই ঘটনা ঘটেছে বস্তিতে আর রাসেল থাকে কলোনিতে। রাসেল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার।’
রাসেলের এক বন্ধু আশরাফ স্বপন বলেন, ‘রাসেলকে যখন অ্যারেস্ট করা হয়েছে তখন বলা হয়েছিল রাসেলকে পিস্তল সহকারে অ্যারেস্ট করা হয়েছে। কিন্তু কোথায় সেই পিস্তল? ডিবি সংবাদ সম্মেলন করেছে, দেশীয় অস্ত্রের ছবি দেখানো হয়েছে। তাতে তো কোন পিস্তল ছিল না। তাহলে এখানে বোঝা যাচ্ছে রাসেল নিরপরাধ।’
বনানী থানা আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াদ আহমেদ অর্নব বলেন, ‘রাসেলের অন্যায় ও আপন খালাতো ভাইকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিল, সবাই খুব ভালো করেই জানে কড়াইলের ওই মারামারিতে রাসেল ধারে কাছেও ছিল না, এবং রাসেল মারামারি করার মতো ছেলে ও না! রাসেলের অন্যায় শুধু একটাই কাউন্সিলর নির্বাচনে রাসেল বর্তমান কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে নির্বাচনে কাজ করেছিলেন। তারই প্রতিহিংসাকে কাজে লাগিয়ে রাসেলকে ফাঁসানো হয়েছে।’
জানা গেছে, রাসেল ১৯ নাম্বার ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি। রাসেলের বাবা মো. আলাউদ্দিন কিডনি এবং হার্টের রোগী, কিয়েটিনিন ৬.৩৬। মা মারা গেছে কিডনির সমস্যায়। রাসেলের দুশ্চিন্তায় তার বাবা অসুস্থ হয়ে প্রায় মৃত্যুসজ্জায়। রাসেলের ২ বছরের একটা ছেলে আছে সারাক্ষণ বাবাকে খুঁজতে থাকে কিন্তু বাবাকে পায় না। বিনাদোষে দোষী করে ওর বাবার আদর থেকে ওকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
আলামিন হত্যার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যারা দোষী তাদের শাস্তি এবং যারা নির্দোষ তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেছে এলাকাবাসী।