বদরুল ইসলাম বিপ্লব, ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল উপজেলার দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান সালাউদ্দীন জনি। ছোট বেলা থেকে তার স্বপ্ন বিমানের পাইলট হয়ে আকাশে ভেসে বেড়ানোর। সেই স্বপ্নকে লালন করে ২০১৭ সালে পরীক্ষামূলক ভাবে দূরপাল্লার বিমান তৈরীর কাজ শুরু করে সালাউদ্দীন জনি । দীর্ঘ ৪ বছর প্রচেষ্টার পর গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চালক বিহীন বিমান আকৃতির ড্রোন উড্ডয়ন করতে সক্ষম হয় সে। বিমান আকৃতির ড্রোন আবিস্কারের পর আকাশে উড়িয়ে ঠাকুরগাঁওয়ে চাঞ্চলের সৃষ্টি করেছে সালাউদ্দীন। দারিদ্রতাও দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। কোন প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই তার উদ্ভাবনী শক্তি দেখে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম।
জেলার রানীশংকৈল উপজেলার বলিদ্বাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের সন্তান সালাউদ্দীন জনি। গ্রামের কলেজ থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করে ভর্তি হয় কৃষি বিভাগে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। কৃষি বিভাগে অধ্যায়নরত ২য় বর্ষের ছাত্র হলেও প্রযুক্তি ও বিজ্ঞান বিষয়ে আগ্রহ এবংং দৃষ্টি ছিল তার বেশি।
২০১৭ সাল থেকে শুরু করে ড্রোন বানানোর কাজ। গবেষণার শুরুর দিকে সে একটি ড্রোন তৈরি করে যার ওজন ছিল ৫ কেজি ও লম্বায় ৫ ফুট এটি সর্বোচ্চ ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১ হাজার ফুট উচ্চতায় ৩৫ মিনিট ধরে উঠতে সক্ষম হয়। পরে বাঁশ, কাঠ, কর্কশীট, ফোমশীট ব্যবহার করে ছোট আকারের ড্রোন বানানোর চেষ্টা করে এবং দীর্ঘ প্রচেষ্টার পরে সফল ভাবে একটি ড্রোন বানাতে সক্ষম হয় সে। যার ওজন ১ কেজি।
পরীক্ষামূলকভাবে এই ড্রোনটি পাঁচ কিলোমিটার নিয়ন্ত্রণ রেখার ভিতরে রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ২ হাজার ফুট উচ্চতায় এবং ঘন্টায় ১শ কিলোমিটার গতিতে ৪০ মিনিট উড়তে পারে। তার বিমান উড্ডয়ন দেখতে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছাদে, ঠাকুরগাঁও বড় মাঠ ও রাণীশংকৈল উপজেলার মীরডাঙ্গী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ভিড় করে শত শত মানুষ।
প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলের সালাউদ্দীন বিমান আবিষ্কার করেছে, এমন দৃশ্য দেখে অভিভূত হয়েছে জেলার মানুষ। তার ইনোভেশন এবং আবিষ্কার গর্বের বিষয়। সরকার যদি তাকে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে সাহায্য সহযোগিতা করে তাহলে সে আরও বড় ধরণের কিছু আবিষ্কার করে দেশের মুখ উজ্জল করবে বলে মনে করেন অনেকে।
সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ও সম্প্রতি চালুকৃত বঙ্গবন্ধু অ্যারোস্পেস এন্ড অ্যারোনোটিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে তরুণদের পড়ার সুযোগ করে দিলে আগামীতে, যে প্রযুক্তির বিমান তৈরী করা হবে সেগুলো দেশের তরুণরাই তৈরী করতে সক্ষম হবে বলে মনে করেন ক্ষুদে এই আবিস্কারক সালাউদ্দীন জনি।
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক ড. কে এম কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, ইচ্ছা শক্তি থাকলে যে কোন মানুষের পক্ষে ব্যতিক্রমী বিষয় আবিস্কার করা সম্ভব জনি তার নজির। এজন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সহায়তা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে। সেখান থেকে যদি সালাউদ্দীনকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করা হয় তাহলে দেশ ও জাতি তার কাছ থেকে অনেক ভালো কিছু পেতে পারে।