শেখ সাখাওয়াত হোসেন পাবনা (জেলা) প্রতিনিধি: দীর্ঘ ২২ বছর পর পাবনার সদর উপজেলার ভাঁড়ারায় আলাউদ্দিন ওরফে আলাল নামের এক বালু ব্যবসায়ীকে অপহরণের পর হত্যার দায়ে চারজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে আসামিদের ২৫ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো এক বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। অপরদিকে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ায় দুইজনকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার ২২ বছর পর সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পাবনার বিশেষ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আহসান তারেক এ রায় ঘোষণা করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট দেওয়ান মজনুল হক, আসামিদের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম সুমন।
সাজাপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন- পাবনা জেলার সুজানগর উপজেলার মৃত ডা. ছলিম উদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর হাসান, ভবানীপুর গ্রামের আব্দুল গণি শেখের ছেলে কালাম শেখ, ভাঁড়ারার আওরঙ্গবাদ এলাকার আকবর শেখের ছেলে নজরুল ইসলাম এবং সদর উপজেলার বাহিরচরের আবুল কাশেমের ছেলে রবিউল ইসলাম রবি। আসামিদের মধ্যে জাহাঙ্গীর হাসান এবং রবিউল ইসলাম রবি আদালতে উপস্থিত ছিলেন বাকি দুইজন পলাতক রয়েছেন। পরে জাহাঙ্গীর ও রবিকে কারাগারে প্রেরণ করেন আদালত।
নিহত আলাউদ্দিন ওরফে আলাল ভাঁড়ারা ইউনিয়নের আওরঙ্গবাদ এলাকার মৃত ইউনুছ আলীর ছেলে। পেশায় ছিলেন একজন বালির ব্যবসায়ী। আলালের সাথে বালির ব্যবসার সূত্রেই আসামি জাহাঙ্গীর হাসানের দীর্ঘ পরিচয় ছিল।
মামলার এজহার সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী লেনদেন নিয়ে তাদের মধ্যে বিরোধ ছিল। সেই বিরোধে ২০০০ সালের ৩ আগস্ট বৃহস্পতিবার সকালের দিকে অন্যান্য আসামিদের দিয়ে নিহত আলাউদ্দিন ওরফে আলালকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যান জাহাঙ্গীর। পরে তাকে হত্যা করে পাশের পাশের চরতারাপুর পয়েন্টের পদ্মা নদীতে ফেলে দেয়। ঘটনার ৩ দিন পর পদ্মা নদী থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে। এ ঘটনায় নিহত আলালের চাচা আনিসুর রহমান বাদী হয়ে পাবনা সদর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় প্রথমে জাহাঙ্গীরকে অব্যাহতি দিয়ে অভিযোগপত্র দিলেও পরে বাদীর না-রাজিতে দ্বিতীয় বারে জাহাঙ্গীরসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। ১২ জনের সাক্ষী ও দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে আজ আদালত এই রায় দিলেন।
অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম সুমন বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে, শুধুমাত্র অভিযোগপত্রের ওপর ভিত্তি করে আদালত এই রায় দিয়েছেন। ফলে আমার মক্কেলরা ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। আমরা উচ্চ আদালত আপিল করবো আশা করি সেখানে আমরা ন্যায় বিচার পাবো। তবে রায়ে সন্তুষ্ট প্রকাশ করেছেন বিশেষ পিপি অ্যাডভোকেট দেওয়ান মজনুল হক।
তিনি বলেন, আসামিদের অপরাধ প্রমাণিত হয়েছে। ফলে আদালত তাদের উপযুক্ত শাস্তি দিয়েছেন। এর মাধ্যমে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলে আমি মনে করি।