জার্মানি থেকে দীর্ঘ পাঁচ মাস পর রাশিয়ায় ফিরেই গ্রেফতার হয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধী নেতা অ্যালেক্সেই নাভালনি। বার্লিন থেকে শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে আসার পরপরই সোমবার (১৭ জানুয়ারি) তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর নাভালনিকে ৩০ দিনের আটকাদেশ দিয়েছে মস্কোর একটি আদালত।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কারাদণ্ডের আদেশকে ‘হাস্যকর’ বলে সমর্থকদের রাস্তায় বিক্ষোভে নামার আহ্বান জানান ৪৪ বছর বয়সী নাভালনি। এ সময় মস্কো পুলিশ স্টেশনের সামনে তার কয়েক ডজন সমর্থক জড়ো হন। তারা চিৎকার করে পুতিনের পদত্যাগ দাবি করে স্লোগান দিতে থাকেন।
মস্কোর খিমকি পুলিশ স্টেশনে নাভালনিকে সারারাত আটক রাখা হয়। পরে সোমবার (১৮ জানুয়ারি) সেখানে আদালত বসিয়ে তার বিচার বসে। বিচারক প্যারোলের শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে নাভালনিকে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আটক রাখার আদেশ দেন।
আগামী ২৯ জানুয়ারি আরেকটি শুনানিতে নাভালনিকে হাজির হতে হবে। তার সাড়ে তিন বছরের স্থগিত দণ্ড আবার কার্যকর করা হবে কি-না, ওই শুনানিতে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
নাভালনি দেশে ফিরছেন খবর পেয়ে আগেই মস্কো বিমানবন্দরে হাজার হাজার সমর্থক তাকে সংবর্ধনা জানাতে বিমানবন্দরে হাজির হন। তবে কর্তৃপক্ষ নাভালনিকে বহনকারী বিমানটি মস্কোতে না অবতরণ করিয়ে শেরেমেতিয়েভো বিমানবন্দরে নিয়ে যায়। সেখানে অবতরণ করার পরই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
অ্যালেক্সেই নাভালনিকে গ্রেফতারের সমালোচনা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইতালি। তারা দ্রুত নাভালনিকে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছে।
এছাড়া নবনিযুক্ত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্ব পাওয়া জেক সুলিভান নাভালিনের গ্রেফতারের সামলোচনা জানিয়ে বলেছেন, ‘নাভালিনের ওপর ক্রেমলিনের এমন আচরণ শুধু মানবাধিকারের লঙ্ঘনই নয় বরং যেসব রুশ নাগরিক কণ্ঠ জোরদার করতে চান তাদের জন্য আঘাত।’
এদিকে গ্রেফতারের আগ মুহূর্তে নাভালনি গণমাধ্যম ও সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমি জানি আমি ঠিক কাজ করেছি। আমি কোনোকিছুতে ভয় পাই না।’ এরপর সীমান্তরক্ষীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনারা কী আমার জন্য দীর্ঘক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছেন?’
নাভালনির সঙ্গে তার স্ত্রীও জার্মানি থেকে দেশে ফিরেছেন। তবে গ্রেফতারের সময় তাকে সরে যেতে বলা হয়। এছাড়া আবেদন করার পরও তার আইনজীবীকেও সঙ্গে যেতে দেয়া হয়নি। এরপর তাকে মস্কোর একটি পুলিশ স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়।
গত ২০ আগস্ট সাইবেরিয়া থেকে মস্কোগামী একটি বিমানে ওঠার কিছুক্ষণ পরেই গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন আলেক্সেই নাভালনি। সাইবেরিয়ার টমস্ক বিমানবন্দরে চায়ের মাধ্যমে বিষপ্রয়োগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তার সমর্থকরা।
রাশিয়ার এই বিরোধী নেতার মুখপাত্র সেসময় জানান, তাদের ধারণা, চায়ের কাপেই বিষ মেশানো হয়েছিল। কারণ বিমানে ওঠার পর অসুস্থ হওয়া পর্যন্ত তিনি ওই চা ছাড়া আর কোনো খাবার গ্রহণ করেননি।
অসুস্থ হওয়ার পরপরই রাশিয়ার যে হাসপাতালটি নাভালনিকে ভর্তি করা হয়েছিল সেখানকার চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়েছিলেন, তার রক্তে বিষাক্ত রাসায়নিকের উপস্থিতি রয়েছে। কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পরেই সুর বদলে তারা বলা শুরু করেন, ওই ধরনের কোনো রাসায়নিক তার রক্তে নেই।
তখন নাভালনির স্ত্রী অভিযোগ করেন, রাশিয়ায় তার স্বামীর সুচিকিৎসা হবে না। এজন্য তিনি নাভালনিকে বিদেশে নিয়ে যেতে চান। তখন চিকিৎসকরা বাধা দিয়ে বলেন, এ অবস্থায় বিদেশে নেয়ার চেষ্টা করলে তিনি যাত্রাপথেই মারা যেতে পারেন। পরে পশ্চিমা দেশগুলোর কিছু নেতা রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ফোন করার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নাভালনিকে ছাড়পত্র দেয় এবং তাকে দ্রুত জার্মানিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
পুতিনের সমালোচক এবং তার সরকারের ঊর্ধ্বতন কমর্কতাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতিবিরোধী প্রচারণার জন্য ৪৪ বছর বয়সী আলেক্সেই নাভালনি বেশ পরিচিত। এর আগেও বিষপ্রয়োগের শিকার হয়েছিলেন তিনি।