রাকিব শান্ত, উত্তরবঙ্গ ব্যুরো প্রধানঃ শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় উত্তরের জেলা বগুড়ায় বেড়েছে শীতের কাপড়ের চাহিদা। পুরো শহর জুড়েই বিভিন্ন এলাকায় বসেছে পুরনো শীতের কাপড়ের বিশাল বাজার। এতে খুসি ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়েই।
বগুড়ায় শীতের মৌসুমে গরম কাপড়ের চাহিদার কথা বিবেচনা করেই শহরের বিভিন্ন স্থানে বসেছে অস্থায়ী পুরনো শীতের কাপড় বিক্রির দোকান। এবছর শীত বেশী পরেছে তাই জেলার ফুটপাতে শীতের কাপড়ের দোকানগুলোতে বিক্রি বেড়েছে। জমে উঠেছে ব্যবসা। পৌষের তীব্র শীতে ভ্রাম্যমাণ এসব দোকানে ভিড় করছে নিম্ন আয়ের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ। শহরের রেলওয়ে হকার্স মার্কেট, সাতমাথার আশেপাশে, কলোনী, আজিজুল হক কলেজ পুরাতন ভবনের সামনে, ঝাওতলা, কালিতলা, কোর্ট এলাকা সহ শহরের বিভিন্ন স্থানে বসেছে এসব দোকান।
কমদামে শীতের কাপড় মিলছে, তাই স্থানীয়দের আগ্রহ এসব দোকানে। ক্রেতারা বলছেন কেবল কমদামে নয়, ভালো মানের পোশাকও পাওয়া যায়।
রেলওয়ে হকার্স মার্কেটের পোশাক বিক্রেতা মো: হোসেন বলেন, প্রতি শীতের সময়ে তারা এখানে গরম কাপড় বিক্রি করেন। মূলত শীত বাড়লে তাদের বেচা-বিক্রি বাড়ে। গত কয়েক দিনের তীব্র ঠান্ডায় তাদের বিক্রি বেড়েছে বলে জানান তিনি। স্টেশন রোডের পোশাক বিক্রেতা জাবেদ হোসেন বলেন, শীতের এ সময়টাতে তাদের প্রচুর ব্যস্ত থাকতে হয়। দাম কম থাকায় এসব পণ্যের চাহিদা বেশি। সামনের দিনগুলোতে আরো বেশি বিক্রির আশা তার।
স্টেশন রোডে শীতের কাপড় কিনতে আসা রিকশা চালক ইলিয়াস ও নুরুদ্দিন বলেন, তারা অল্প আয়ের মানুষ। বড় বড় শপিংমল থেকে শীতের পোশাক কেনার সামর্থ না থাকাতে ফুটপাত থেকেই তারা কাপড় কিনেন। এসব কাপড় কিছুটা পুরাতন হলেও শীত নিবারনে ভালো কাজ দেয়।
একইসাথে শহরের বিভিন্ন শপিংমল ও বিপণীতানগুলোতেও বিক্রি বেড়েছে শীতের পোশাক। এছাড়া ভ্যানে করেও অনেকে শীতের পোশাক বিক্রি করছেন।
এসব শীত কাপড়ের মধ্যে রয়েছে প্যান্ট, ট্রাউজার, শার্ট, চাদর, জ্যাকেট, সোয়েটার, উলের টুপি, মাফলার, কোট, কান টুপি, মোজাসহ হরেক রকম শীতের পোশাক। ছেলে, মেয়ে, শিশু, বয়স্কসহ নানান বয়সের মানুষের কাপড় এসব স্থানে পাওয়া যায় স্বল্প মূল্যে। ২০ টাকা থেকে শুরু করে ২০০/৩০০ টাকার মধ্যে এসব পোশাক কিনতে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ভিড় লেগে থাকে। পছন্দের পোশাকটি কিনতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুঁটছেন ক্রেতারা। ক্রেতা-বিক্রেতাদের দর-দামে মুখরিত হচ্ছে অস্থায়ী এসব দোকান।
তবে বিক্রি ও লাভ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে। কেউ কেউ বলছেন, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো লাভ পেয়েছি “। আবার কেউ কেউ বলছেন লাভ কম হবে কারণ ক্রয় মূল্য বেশি পরেছে। তবে সবকিছু মিলিয়ে পুরাতন কাপড়ের দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ভিড় লক্ষ করা গেছে।
শীত নিবারণে এসব পোশাক কিনে একদিকে যেমন লাভবান হচ্ছে স্বল্প আয়ের মানুষ, তেমনি ভালো বিক্রিতে মুনাফা করছেন ব্যবসায়ীরাও।
ব্যবসায়ী নেতারা জানান, শীতের মৌসুমে এসব পোশাক বেচাকেনায় গরীব মানুষের উপকার হয়, অর্থনৈতিক ভাবে তাদের সাশ্রয় হয় এবং যারা বিক্রি করেন তাদেরও লাভ হয়।
স্বল্প আয়ের মানুষের কথা চিন্তা করেই ফুটপাতে এসব ব্যবসা পরিচালনায় সাময়িক ছাড় দেয়া হচ্ছে বলে জানান পৌর মেয়র রেজাউল করিম বাদশা। তিনি বলেন, শীতের মৌসুমে মানবিক কারণে তাদেরকে একটু ছাড় দেয়া হয়। অন্তত তারা নির্দিষ্ট স্থান বেছে নিয়ে বেচাকেনা করুক যাতে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না হয়, জনগণের চলাচলের ক্ষেত্রে জনদুর্ভোগ যেনো না হয়।
ব্যবসায়ী নেতারাও চান ব্যবসার এমন প্রসার। ফুটপাতে বগুড়ার এই পুরাতন শীতবস্ত্রের ব্যবসায় কয়েক কোটি টাকার ব্যবসার প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।