আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী সন্দেহে ভারতের কর্ণাটকের বেঙ্গালুরুর কারাগারে বন্দী রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের এক দম্পতি। রেহাই পায়নি তাদের দেড় বছর বয়সী সন্তানও। এ নিয়ে দুই রাজ্যে চলছে ব্যাপক তোলপাড়।
পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজারের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত আট মাস ধরে বাংলাদেশি সন্দেহে কর্ণাটকের জেলে বন্দী রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের বাসিন্দা পলাশ অধিকারী ও তার স্ত্রী শুক্লা অধিকারী। সঙ্গে রয়েছে তাদের দুধের সন্তানও। তাদের উদ্ধার করতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে পলাশের বাবারও।
মঙ্গলবার আনন্দবাজার অনলাইনে এই প্রতিবেদন পড়ে ওই দম্পতিকে ফেরানোর উদ্যোগ নিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি ও বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী। তিনি কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাইয়ের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলেছেন।
অধীরের দপ্তর বলছে, ইতোমধ্যে কর্ণাটকের মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তরের প্রধান সচিব এবং বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে দফায় দফায় যোগাযোগ হয়েছে। বুধবার দু’পক্ষের মধ্যে কয়েক বার আলোচনা হয়েছে। কীভাবে ওই দম্পতি এবং তাদের সঙ্গে আটকে থাকা অন্যান্যদের বাড়িতে ফেরানো যায়, সে ব্যাপারে আলোচনা হচ্ছে।
পূর্ব বর্ধমানের জামালপুর থানার জৌগ্রাম পঞ্চায়েতের তেলে গ্রামের বাসিন্দা পলাশ এবং শুক্লা। নিম্নবিত্ত ওই পরিবারের সদস্যরা বাড়তি আয়ের আশায় গত বছরের জুন মাসে বেঙ্গালুরু যান। উঠেছিলেন মারাথাহাল্লি মহকুমার ভারথুর থানার সুলিবেলা গ্রামে একটি বাড়িতে। হোটেল, রেস্তোরাঁ, সিনেমা হলসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে বর্জ্যবস্তু, বোতল, প্লাস্টিক জাতীয় সরঞ্জাম বাছাই করা ছিল তাদের কাজ।
গত ২৭ জুলাই ভারথুর থেকে সস্ত্রীক পলাশকে বাংলাদেশি সন্দেহে গ্রেফতার করে কর্ণাটক পুলিশ। নিজেদের ভারতীয় বলে প্রমাণ করতে গিয়ে আধার, প্যান, ভোটার কার্ড পুলিশকে দিয়েছিলেন পলাশ। পুলিশ পলাশের বৃদ্ধ বাবা, মা এবং প্রতিবেশী সুনীল অধিকারীকে ছেড়ে দিলেও তাকে এবং তার স্ত্রী ও শিশুপুত্রকে ছাড়েনি বলে অভিযোগ রয়েছে। ছেলে-পুত্রবধূ এবং নাতিকে ছাড়িয়ে আনতে অনেক চেষ্টা করেছেন বৃদ্ধ পঙ্কজ।
কিন্তু দরিদ্র ওই বৃদ্ধ আইনি লড়াই করতে গিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বলে পরিবারের দাবি। সেখানেই মৃত্যু হয় তার। মঙ্গলবার গ্রামে বৃদ্ধের দেহ ফিরলে শেষকৃত্য করেন দুই মেয়ে।
আনন্দবাজার লিখেছে, কেন পলাশ এবং তার স্ত্রী-পুত্র এখনও বেঙ্গালুরুতে জেলবন্দি, তা নিয়ে বিস্মিত স্থানীয় প্রশাসনও। রাজ্যের সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, ভারথুর থানার পুলিশ এসে পলাশ ও তার পরিবারের তথ্য যাচাই করে গেছেন। তারপরও তাদের কেন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে, সেটি পরিষ্কার নয়।
পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি ও বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী বলেন, ‘এটা অত্যন্ত মর্মান্তিক ঘটনা। খবরটি পড়ে আমার খুব খারাপ লেগেছে। আমি তাদের সাহায্য করব। চেষ্টা করব ফিরিয়ে আনার।’