আন্তর্জাতিক ডেস্ক: বিদেশি মুদ্রার তীব্র সংকট চলায় অবশেষে কঠিন পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হলো শ্রীলঙ্কা। আগামী এক বছর পর্যন্ত জ্বালানি আমদানি সীমিত রাখার ঘোষণা দিয়েছে দেশটির সরকার।
মঙ্গলবার এক টুইটবার্তায় এই তথ্য জানান জ্বালানিমন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকেরা। টুইটবার্তায় তিনি বলেন, ‘বিদেশি মুদ্রার মজুত সংকটের কারণে আগামী ১২ মাস জ্বালানি আমদানি সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।’
উইজেসেকেরা আরও জানান, চলতি সপ্তাহ থেকেই সরকারের পক্ষ থেকে রেশন ভিত্তিতে জ্বালানি সরবরাহ করা হবে দেশবাসীকে।
গত তিন দশকে মোট ছয়বার দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ রনিল বিক্রমাসিংহে গত সপ্তাহে পার্লামেন্ট ভোটে বিজয়ী হয়ে প্রথমবারের মতো দেশের প্রেসিডেন্টের পদে আসীন হয়েছেন।
জ্বালানি আমদানির এই সাময়িক নিষেধাজ্ঞাকে বিক্রমাসিংহের নেতৃত্বাধীন সরকারের দেশ পরিচালনা বিষয়ক প্রথম পদক্ষেপ বলে এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে রয়টার্স।
বিগত সরকারের অদক্ষতা-অব্যবস্থাপনা, অযৌক্তিক কর কাটছাঁট ও করোনা মহামারির জেরে নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কার বর্তমানে বিদেশি মুদ্রার মজুত বলতে প্রায় কিছুই নেই। ফলে বিদেশ থেকে খাদ্য, ওষুধ ও জ্বালানির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যও আমদানি করতে পারছে না ভারত মহাসাগরের ক্ষুদ্র এই দ্বীপদেশ।
এই ভয়াবহ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের জন্য রাজাপাকসে ভাইদের নেতৃত্বাধীন সরকারকে দায়ী করে চলতি বছর মার্চ থেকে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করেন শ্রীলঙ্কার সাধারণ জনগণ। তারপর অনেক ঘটনা-দুর্ঘটনার পর চলতি জুলাইয়ের মাঝামাঝি প্রেসিডেন্ট গোতাবায়ার দেশত্যাগের মধ্যে দিয়ে শেষ হয় আন্দোলন।
তীব্র জ্বালানি সংকট ও ব্যাপক আন্দোলন চলার কারণে গত প্রায় ১ মাস বন্ধ ছিল শ্রীলঙ্কার স্কুলগুলো। সোমবার দেশের সব স্কুল খুলে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া জ্বালানি সংকটের কারণে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হোম অফিসের যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, তাতেও আনা হয়েছে পরিবর্তন।
নতুন সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, আগামী মাস থেকে কর্মস্থলে যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের।
এদিকে, শ্রীলঙ্কার দ্বিতীয় বৃহৎ জ্বালানি তেল বিক্রেতা কোম্পানি লঙ্কা আইওসির পরিচালক মনোজ গুপ্ত রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আগামী আগস্টে বিদেশ থেকে দুটি জ্বালানি তেলের চালান আনছে লঙ্কা আইওসি। দুই চালানে মোট ৩০ হাজার টন পরিমাণ জ্বালানি তেল থাকবে।
রয়টার্সকে মনোজ গুপ্ত বলেন, ‘মূলত বিভিন্ন কারখানায় সরবরাহের জন্য এই জ্বালানি আমদানি করা হচ্ছে। দেশে বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণে আমরা সরকারের সঙ্গে সমন্বিতভাবে কাজ করছি।’