বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: আলাপন ইস্যুতে রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়ানোর পুরস্কার পেলেন অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার জহর সরকার। রাজ্যসভায় দীনেশ ত্রিবেদীর ছেড়ে যাওয়া আসনে জওহর সরকারকে প্রার্থী ঘোষণা করল তৃণমূল। জহরবাবু প্রসার ভারতীর সিইও ছিলেন। যদিও তাঁর কার্যকাল বিতর্কের বাইরে থাকেনি। শুক্রবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, বাংলায় রাজ্যসভার একটি আসনে উপনির্বাচন হবে ৯ আগস্ট।
রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য সংঘাতে রাজ্যের পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন জহর সরকার–সহ রাজ্যের কয়েকজন প্রাক্তন আইএএস অফিসার। শুধু তাই নয়, তাঁরা নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সংবাদ মাধ্যমের কাছে রীতিমতো তোপ দেগেছিলেন তখন। আলাপনকে কেন্দ্রীয় সরকার দিল্লিতে তলব করায় ‘নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহ পাগল হয়ে গিয়েছেন’ বলে টুইটারে লিখেছিলেন জহরবাবু। অনেকেই তখন তাঁদের এমন মন্তব্যের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন। কেউ কেউ ইঙ্গিত করেছিলেন, রাজ্যসভার সাংসদ হওয়ার জন্যেই তাঁরা মুখ্যমন্ত্রীকে খুশি করতে আলাপন ইস্যুতে মুখ খুলেছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, এদিন রাজ্যসভার আসনে জহর সরকারকে প্রার্থী মনোনীত করায় তাঁদের ইঙ্গিতই ঠিক বলে প্রমাণ হল। ফলে রাজনীতি বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করছেন, আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বিতর্কে প্রাক্তন আমলারা হিসেব কষেই মুখ খুলেছিলেন। তাঁদের মধ্যে জহর সরকার প্রথম পুরস্কারটি পেলেন। এর পর অন্য আধিকারিকরা কী পুরস্কার পান, সেটাই এখন দেখার।
তৃণমূলের দীনেশ ত্রিবেদী সাংসদ পদে ইস্তফা দেওয়ায় ওই আসনটি ফাঁকা ছিল। উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩ এপ্রিল রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ হন দীনেশ। ২০২৬ সালের ২ এপ্রিল পর্যন্ত মেয়াদ ছিল তাঁর। কিন্তু ১২ ফেব্রুয়ারি তিনি সাংসদ পদে ইস্তফা দেন। তৃণমূল থেকেও বেরিয়ে যান। যোগ দেন বিজেপিতে। ফলে সেই আসনটিতে নির্বাচন অবশ্যম্ভাবী ছিল। সেই ফাঁকা জায়গায় এবার জহরকে প্রার্থী করে পাঠাচ্ছেন তৃণমূল দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর জহর সরকার চুপ করে থাকেননি। রীতিমতো রাজনৈতিক নেতার ঢঙেই জানান, শনিবার সকালে মমতা ফোন করেন তঁাকে। রাজ্যসভার জন্য তৃণমূলের তরফে তঁার কথা ভাবা হচ্ছে বলে তাঁকে তিনি জানান। এই প্রস্তাবে তিনি রাজি কিনা, তা–ও মমতা জানতে চান। তখনই জহরবাবু জানিয়ে দেন, তাঁর কোনও আপত্তি নেই। এর পরই তৃণমূলের তরফে তাঁর নাম ঘোষণা করে দেওয়া হয়।
এদিকে, রাজ্যসভায় সাংসদ হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত তৃণমূল প্রার্থী তথা প্রাক্তন আমলা জহর সরকার। তিনি জানিয়েছেন, সংসদে গিয়ে তিনি এবার নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহর মুখোশ খুলে দেবেন। অন্যদিকে, দীনেশ ত্রিবেদীর জায়গায় বিজেপিতে অবহেলিত হয়ে দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহাকে প্রার্থী করবেন বলে শোনা গিয়েছিল। বিধানসভা নির্বাচনের আগে বেশ কয়েকবার সাংবাদিক বৈঠক করে তৃণমূলের পক্ষে এবং বিজেপির বিরুদ্ধে বিষোদ্গারও করেছিলেন যশবন্ত। নির্বাচনের পরে বিজেপির বিরুদ্ধে সুর আরও চড়াচ্ছিলেন তিনি। মনে করা হচ্ছিল, মমতাকে খুশি করতেই তিনি এ ভাবে নিজের পুরনো দলকে আক্রমণ করছেন। মমতারও যে তাঁকে প্রার্থী করতে আপত্তি ছিল না, সে কথা তৃণমূল সূত্রেই তখন জানা গিয়েছিল।
কিন্তু বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘বহিরাগত’ বলে আক্রমণ শানিয়েছিলেন স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই। তাই দিল্লির একজনকে এখন রাজ্যসভার জন্য প্রার্থী করা হলে একই অভিযোগ উঠবে মমতার বিরুদ্ধে। তাই অনেক ভাবনাচিন্তা করেই যশবন্ত সিনহাকে প্রার্থী না করে মমতা বেছে নিয়েছেন জহর সরকারকে। যদিও বিষয়টি নিয়ে যশবন্ত সিনহা কোনও প্রতিক্রিয়া এখনও জানাননি। তবে জহর সরকারকে প্রার্থী করার ঘটনা তাঁকে অনেকটাই হতাশ করবে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।