নিজস্ব প্রতিবেদকঃ রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে আলোচিত আলামিন হত্যার এক মাস হলেও মামলার মূল আসামি এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। নিহত আলামিনের পরিবারকে আসামিরা বিভিন্নভাবে প্রাণনাশের হুমকি, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে এলাকা ছাড়া করার মত হুমকি দিচ্ছে। এতে আলামিনের পরিবার জীবনের নিরাপত্তাহীনতায় ভূগছেন বলে দাবি করছেন।
এরই মধ্যে আলামিন হত্যায় জড়িত পাঁচ আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- মোহাম্মদ আলী, মো. খাজা, মো. আমজাদ হোসেন, মো. হুমায়ুন কবির রাসেল (৩৪) এবং মাসুদ আলম। তাদের কাছ থেকে বড় ছোরা, চাপাতি ও ডিস্ক কুড়াল, লোহার রডসহ দেশি অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। ডিএমপির গুলশান বিভাগ তাদের গ্রেপ্তার করে। তবে এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরেই মূল আসামি নুর আলম ওরফে নুরু সহ অন্যান্য অভিযুক্তরা। তারা আটক না হওয়ায় ভুক্তভোগী পরিবার ও এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ১৭ আগষ্ট এশার নামাজের সময় কড়াইল বস্তির নূরানী মসজিদের ভেতরে নির্মমভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয় যুবলীগ নেতা আলামিনকে। এই ঘটনায় মারাত্মক আহত হয় তাঁর ভাইসহ আরও কয়েকজন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান ওইদিন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুর নেতৃত্বে ভাইগ্না আলী, মোহাম্মদ আলী, কবির, আজিজুল, খাজা , আমজাদ গং হামলা চালায়। এসময় তারা একাধিক ঘর এবং দোকানও ভাঙচুর করে।
আলামিন হত্যার ঘটনায় বনানী থানায় ২২ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন আলামিনের মেজো ভাই মো. জুয়েল সরকার। মামলার আসামিরা হলেন- মো. নুর আলম নুরু (৩৮), মোহাম্মদ আলী (৫৫), মো. খাজা (৪৫), মো. আমজাদ (৩০), মো. রাসেল (৩৫), মো. মাহাবুর আলম (২১), মো. কবির (৩৮), মো. মাসুদ রানা (১৯), মো. আলী হোসেন (২৭), মো. আজিজুল (৩২), মো. সেন্টু মৃধা (৫০), মো. শফিকুল ইসলাম রাজু (৪০), মো. মাহবুব আলম (৩৫), মো. তানভীর (২০), মো. মামুন (২০), মো. সাব্বির (১৯), মো. মেহেদী (১৯), মো. ইলিয়াস আহমেদ (২২), মো. শহিদুল (৩৫), স্বাধীন (১৯), মো. নাজির (৪০) ও কাউসার (৫৫)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা ২০/২৫ জনের আসামি করা হয়েছে।
হত্যার মূল আসামি নুরু সহ অন্যান্য আসামিরা এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে, রহস্যজনক কারণে পুলিশ আসামিদের গ্রেপ্তার করছেনা বলে অভিযোগ করেছেন মামলার বাদী মো. জুয়েল সরকার। তিনি বলেন, আসামিদের লোকজন প্রতিনিয়ত তাকে হত্যা, এলাকা ছাড়া ও বিভিন্ন মামলায় জড়ানোর হুমকি দিচ্ছে। বিভিন্ন মহলের মাধ্যমে মামলার আপোষ দিতে চাপপ্রয়োগ করছে। একই অভিযোগ করেছেন আলামিনের স্ত্রী রিতা আক্তার।
তবে পুলিশ বলছে আসামিদেরকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। খুব শীঘ্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে আলামিন হত্যায় গ্রেপ্তার হওয়া পাঁচ আসামির মধ্যে মো. হুমায়ুন কবির রাসেল (৩৪) নির্দোষ বলে দাবি করেছে তাঁর পরিবার। রাসেলের পরিবার দাবি করেছে, নির্বাচনের সময় স্থানীয় কাউন্সিলর মফিজুরের সমর্থন না করায় পূর্ব শত্রুতার জের ধরে রাসেলের নাম এই মামলায় অন্তর্ভুক্ত করে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে। এছাড়া রাসেলের পরিবার বলেছে, ‘এলাকার কেউ বলতে পারবে না রাসেল কোনোদিন কোনো ধরনের মারামারি বা ঝামেলার সাথে জড়িত ছিল। গত ১৭ আগষ্ট সংঘর্ষস্থলে রাসেলকে কেউ দেখেছে এই কথাও বলতে পারবে না। সেদিনের সংঘর্ষের ঘটনায় রাসেলের এক আপন খালাতো ভাই আহত হয়েছিল, তাঁকে হাসপাতালে দেখতে যাওয়াটাই ছিল রাসেলের অপরাধ।’
সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যারা দোষী তাদের শাস্তি এবং যারা নির্দোষ তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি প্রদানের আবেদন করেছে রাসেলের পরিবার।