রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি: পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে রাঙ্গামাটি কুদুকছড়িতে চার সংগঠনের মানববন্ধন
রাঙ্গামাটি প্রতিনিধি: আজ সোমবার (১৫ আগস্ট ২০২২) অপারেশন উত্তরণের নামে অঘোষিত সেনা শাসন তুলে নাও, Stop Human Violation in Chittagong Hill Tracts”দাবি সম্বলিত শ্লোগানে সকাল ১১ টার সময় জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেটকে পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার প্রতিবাদে রাঙ্গামাটি কুদুকছড়িতে মানববন্ধন করেছে বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি), পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘ, গণতান্ত্রিক যুব ফোরাম, হিল উইমেন্স ফেডারেশন রাঙ্গামাটি জেলা কমিটি।
উক্ত মানববন্ধনে পার্বত্য চট্টগ্রাম নারী সংঘের রাঙ্গামাটি জেলা কমিটির সভাপতি রিনিশা চাকমার সভাপতিত্বে ও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ রাঙ্গামাটি জেলার সাধারণ সম্পাদক তনুময় চাকমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন,গণতান্ত্রিক যুব ফোরামের জেলা প্রতিনিধি কার্বন চাকমা ,হিল উইমেন্স ফেডারেশনের রাঙ্গামাটি জেলা সভাপতি রিমি চাকমা।
সভাপতির বক্তব্যে রিনিশা চাকমা বলেন, গতকাল ১৪ আগস্ট ২০২২ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট বাংলাদেশ সফরে এসেছেন। থাকবেন ১৮ আগস্ট পর্যন্ত। মিশেল ব্যাচলেট সফরে সরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা , নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের এবং রোহিঙ্গা শিবিরে যাওয়ার কথা থাকলেও সর্বাধিক মানবাধিকার লঙ্ঘিত এলাকা পার্বত্য চট্টগ্রামে তিনি আসতে পারছেন না।
বিশেষ সূত্রে জানা গেছে, মিশেল ব্যাচেলেট পার্বত্য চট্টগ্রামে আসতে চাইলেও তাকে প্রবেশের অনুমতি দেযা হচ্ছে না।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ার মধ্য দিয়ে শাসকগোষ্ঠী স্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছে যে,এখানে প্রতিনিয়ত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে। বর্তমান ফ্যাসিবাদী সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলোকে ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না।
রিমি চাকমা বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামকে দীর্ঘদিন ধরে বর্ণবাদীর চোখে দেখা হচ্ছে। এক দেশে দুই শাসনব্যবস্থা জারি রাখা হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক দশক ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে অপারেশন উত্তরণের নামে সামরিক শাসন জারি রেখে পার্বত্য চট্টগ্রামের জাতিসত্তাসমূহের নিরাপত্তা হুমকির মূখে রাখা হয়েছে। যে সেনাবাহিনী বিদেশে শান্তিরক্ষা মিশনে সুনাম অর্জন করছে সেই সেনাবাহিনী কর্তৃক পার্বত্য চট্টগ্রামে নারী ধর্ষণ থেকে শুরু করে খুন,গুম,ক্রস ফায়ার, ভূমি বেদখল , পাহাড়িদের বাড়িতে অগ্নিসংযোগ,বেআইনি তল্লাসির মত মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।
২০১৭ সালের ১৯ এপ্রিল সেনাবাহিনীর মেজর তানভিরের নেতৃত্বে শারিরীক নির্যাতনে খুন হন সাবেক পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের নেতা রমেল চাকমা। ইউপিডিএফ সংগঠক নবায়ন চাকমা(সৌরভ) কে ১৫ মার্চ ২০২২ ভোর রাতে সেনাবাহিনী কর্তৃক শারিরীক নির্যাতনে খুন করা হয়।
যুব নেতা কার্বন চাকমা বলেন, সাবেক যুব নেতা ও ইউপিডিএফ সংগঠক মাইকেল চাকমাকে ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল রাষ্ট্রীয় বাহিনী কর্তৃক গুম করা হয়, যার এখনো হদিস পাওয়া যায় নি। গত ৫ জুলাই মহালছড়িতে সেনাবাহিনী মদদে ৩৭ টি পাহাড়ি বাড়ি ঘরে অগ্নিসংযোগ , ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়। বান্দরবানে লামা উপজেলায় রাবার ইন্ডাস্ট্রির নামে ¤্রাে ও ত্রিপুরাদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করা হচ্ছে। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রকাশ ।
সরকারের প্রতি বক্তরা নিন্মলিখিত দাবি জানান:
১. পার্বত্য চট্টগ্রামে বিচার বর্হিভূত হত্যা, খুন,গুম, অপহরণসহ মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ করতে হবে।
২. ইউপিডিএফের উপর দমন-পীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং গ্রেফফতারকৃত সকল নেতা-কর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দিতে হবে।
৩. সেনাশাসন অপাারেশন উত্তরণ তুলে নিতে হবে এবং অস্থায়ী সকল সেনা ক্যাম্প প্রত্যাহারপূর্বক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।
৪. বহিরাগত বাঙ্গালি সেটলারদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সমতলে সম্মানজনকভাবে পুনর্বাসন করতে হবে।
৫. নারী নির্যাতন বন্ধ করতে হবে এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা দিতে হবে।
৬. সেনা মদদে সন্ত্রাসী কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে এবং সেনা মদদপুষ্ট সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭. দেশের সংখ্যালঘু জনগণের ওপর হামলা, নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে এবং
৮. বাংলাদেশ সফরকালে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারকে পার্বত্য চট্টগ্রামে প্রবেশের ও অবাধে তথ্য সংগ্রহের অনুমতি দিতে হবে।