1. abrajib1980@gmail.com : মো: আবুল বাশার রাজীব : মো: আবুল বাশার রাজীব
  2. abrajib1980@yahoo.com : মো: আবুল বাশার : মো: আবুল বাশার
  3. chakroborttyanup3@gmail.com : অনুপ কুমার চক্রবর্তী : অনুপ কুমার চক্রবর্তী
  4. Azharislam729@gmail.com : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়
  5. bobinrahman37@gmail.com : Bobin Rahman : Bobin Rahman
  6. farhana.boby87@icloud.com : Farhana Boby : Farhana Boby
  7. mdforhad121212@yahoo.com : মোহাম্মদ ফরহাদ : মোহাম্মদ ফরহাদ
  8. harun.cht@gmail.com : চৌধুরী হারুনুর রশীদ : চৌধুরী হারুনুর রশীদ
  9. shanto.hasan000@gmail.com : রাকিবুল হাসান শান্ত : রাকিবুল হাসান শান্ত
  10. msharifhossain3487@gmail.com : Md Sharif Hossain : Md Sharif Hossain
  11. humiraproma8@gmail.com : হুমায়রা প্রমা : হুমায়রা প্রমা
  12. dailyprottoy@gmail.com : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক : প্রত্যয় আন্তর্জাতিক ডেস্ক
  13. namou9374@gmail.com : ইকবাল হাসান : ইকবাল হাসান
  14. mohammedrizwanulislam@gmail.com : Mohammed Rizwanul Islam : Mohammed Rizwanul Islam
  15. hasanuzzamankoushik@yahoo.com : হাসানুজ্জামান কৌশিক : এ. কে. এম. হাসানুজ্জামান কৌশিক
  16. masum.shikder@icloud.com : Masum Shikder : Masum Shikder
  17. niloyrahman482@gmail.com : Rahman Rafiur : Rafiur Rahman
  18. Sabirareza@gmail.com : সাবিরা রেজা নুপুর : সাবিরা রেজা নুপুর
  19. prottoybiswas5@gmail.com : Prottoy Biswas : Prottoy Biswas
  20. rajeebs495@gmail.com : Sarkar Rajeeb : সরকার রাজীব
  21. sadik.h.emon@gmail.com : সাদিক হাসান ইমন : সাদিক হাসান ইমন
  22. safuzahid@gmail.com : Safwan Zahid : Safwan Zahid
  23. mhsamadeee@gmail.com : M.H. Samad : M.H. Samad
  24. Shazedulhossain15@gmail.com : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু : মোহাম্মদ সাজেদুল হোছাইন টিটু
  25. shikder81@gmail.com : Masum shikder : Masum Shikder
  26. showdip4@gmail.com : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ : মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ
  27. shrabonhossain251@gmail.com : Sholaman Hossain : Sholaman Hossain
  28. tanimshikder1@gmail.com : Tanim Shikder : Tanim Shikder
  29. riyadabc@gmail.com : Muhibul Haque :
  30. Fokhrulpress@gmail.com : ফকরুল ইসলাম : ফকরুল ইসলাম
  31. uttamkumarray101@gmail.com : Uttam Kumar Ray : Uttam Kumar Ray
  32. msk.zahir16062012@gmail.com : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক : প্রত্যয় নিউজ ডেস্ক
সুন্দরী, সেগুন আর ম্যানগ্রোভের দেশে - দৈনিক প্রত্যয়

সুন্দরী, সেগুন আর ম্যানগ্রোভের দেশে

  • Update Time : রবিবার, ২৩ জানুয়ারী, ২০২২
  • ৮০৪ Time View

সুন্দরী, সেগুন আর ম্যানগ্রোভের দেশে

লতিফুর রহমান প্রামানিক

(দ্বিতীয় পর্ব)

জাহাজে আগে কখনো ভ্রমণ করা হয়নি, এবারই প্রথম। সুন্দর একটা জাহাজ। জাহাজ পেয়ে হাফ চেড়ে যেন বাচিঁ।  আমাদের সবার জন্য আলাদা আলাদা ক্যাবিন বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নিচতলা আর দোতলায় পাশাপাশি কেবিন। আমি সফি কামাল, আরিফ , লাভলু ভাই আর আমি এক কেবিনে। খানিকটা পরে বকুল এসে মনক্ষুন্ন অভিযোগ নিয়ে এলো। সে চায় আমাদের সাথে থাকতে। তার সাথে সাকি ভাইয়ের কেবিন হওয়ার সাচ্ছন্দ্যটা তার হবে না। লাভলু ভাই সিনিয়র হলেও আমাদের সাথে তার সম্পর্ক খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ তিনি নাছোড়বান্দা যাবেন না। শফি কামাল আর আরিফের ও কথা তাই। আমি চুপচাপ হয়ে থাকি। কাউকে কিছু বলার মতো নয়। অগত্যা মন খারাপ করে বকুল তার কেবিন চলে যায়।  খুব ক্ষুধার্ত ছিলাম আমরা। সকালের নাস্তার জন্য সবাই ব্যতিব্যস্ত হয়ে যাই। দেখতে দেখতে ভোরের আলো ফুটে ওঠে। জাহাজ থেকে নদীর জলকে আরো বেশি শান্ত আর কোমল মনে হয়। বলতে গেলে সাহস টা তখন অনেক বেড়ে গেছে।  আলোতে সমস্ত নদীর অঞ্চল আরো প্রানবন্ত হয়ে উঠে। জাহাজের ক্যাপ্টেন মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলছে, আমরা এখন আমাদের যাত্রা শুরু করব, আপনারা উপর তলায় এসে নাস্তা সেরে নিন। জাহাজ ছাড়ার কথা শোনামাত্র যেন মনের ভিতরে আনন্দধারা বইতে লাগলো।

সকাল সাতটা ছুইছুই। জাহাজের হুইসিল বেজে ওঠে।  এগিয়ে চলছে জাহাজ। নতুন কে দেখার উন্মাদনা শুরু হয়ে যায় আমাদের। বলতে গেলে সবাই এই পথের প্রথম অভিযাত্রী। আমরা যেন আবিস্কারের নেশায় বুদ হয়ে আছি। নাস্তা সেরে কফির পেয়ালা হাতে নিয়ে জাহাজের ছাদে এসে চেয়ারে বসে পড়ি কমবেশি সবাই। অনিন্দ সুন্দর রূপসা নদী। সকালের হালকা বাতাস আর মাখানো রোদের আদরে দুষ্টুমিতে মেতে উঠি সবাই। সে এক দারুণ মুহূর্ত। এক দারুণ স্মৃতি। আমাদের জাহাজ চলেছে। নদীর বুকের ভিতর ভেসে চলছে রঙ বেরং জাহাজ আর নৌকার বহর। মাইকে ঘোষণা দিয়ে বলছে, সামনে হাতের ডান ধারে দেশের দ্বিতীয় বৃহতম খুলনা শিপ ইয়ার্ড।  কিছুটা এগুতে চোখের সামনে ভেসে আসে শিপ ইয়ার্ড।

খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড বাংলাদেশের খুলনা শহরের উপকন্ঠে অবস্থিত একটি জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামত প্রতিষ্ঠান যা বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়। এটি জার্মান সহায়তায় ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

১৯৪৭ সালের ভারত ভাগের পর পাকিস্তান ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (পিআইডিসি) খুলনায় একটি শিপইয়ার্ড নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। এর জন্য তারা জন্য পশ্চিম জার্মানির মেসার্স স্টাকেন শনকে নিযুক্ত করে। ১৯৫৪ সালে নির্মাণকাজ শুরুর পর খুলনা শিপইয়ার্ড ১৯৫৭ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে উৎপাদনে যায়। সে সময়কার রূপসা নদীর প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা ও গভীরতাকে বিবেচনায় রেখে সর্বোচ্চ ৭০০ টন (আড়াই হাজার টন) হালকা ওজনের কার্গো ধারণসম্পন্ন জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতের সুযোগ-সুবিধা রেখে এটি নির্মিত হয়।

উৎপাদনের শুরুর পর থেকে ১৯৫৯ সাল পর্যন্ত নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে। পরে ১৯৬৫ সাল পর্যন্ত জার্মান এবং ব্রিটিশ ব্যবস্থাপনায় কার্যক্রম পরিচালিত হয়। ১৯৬৫ সালে ইস্ট পাকিস্তান ইন্ডাস্ট্রিয়াল ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন (ইপিআইডিসি) এটি পরিচালনার দায়িত্ব নেয়।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করার পর বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (বিএসইসি) এটি পরিচালনার দায়িত্ব পায়। প্রথম দিকে সফলভাবে পরিচালিত হলেও ৮০’র দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকশানে পড়তে থাকে। ৯০’র দশকে এসে এটি লোকসানের ভারে বন্ধ হওয়ার আশঙ্কায় পড়ে ও দেনার পরিমান ৯৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকায় পৌছে। সেই সময়ে সরকার প্রতিষ্ঠানটিকে রুগ্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠান হিসেবে চিহ্নিত করে। পরে ১৯৯৯ সালের ৩ অক্টোবর বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্ব দেওয়া হয়।
২০১৭-১৮ অর্থবছরে খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড ছোট বড় জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতসহ বিভিন্ন খাতে প্রায় ১৬৫ কোটি টাকা আয় করে।

আমরা আজ কালের সাক্ষী হলাম। যতটা এগিয়ে চলছি সব কিছু আমাদের জন্য প্রথম প্রেমের মতো মনে হচ্ছিল।  প্রথম সবকিছুই সুন্দর।

অদূরে দৈত্য আকৃতির বাঁকানো বিশাল খান জাহান আলী বা রূপসা সেতু। সম্ভবতঃ এতো সুন্দর আর উঁচু সেতু দেশে এটাই একমাত্র। মুগ্ধ হলাম এর কারুকাজ আর নকশা দেখে।

খানজাহান আলী সেতু রূপসা নদীর উপর নির্মিত একটি সেতু। এটি রূপসা সেতু নামেও পরিচিত। এই সেতুর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো দুই প্রান্তে দুটি করে মোট চারটি সিড়ি রয়েছে যার সাহায্যে মূল সেতুতে উঠা যায়। প্রতিদিন প্রচুর দর্শনার্থী সেতুটি পরিদর্শন করতে আসেন।

খুলনা শহরের রূপসা থেকে ব্রিজের দূরত্ব ৪.৮০ কি.মি। এই সেতুকে খুলনা শহরের প্রবেশদ্বার বলা যায় কারণ এই সেতু খুলনার সঙ্গে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলির বিশেষত মংলা সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হয়েছে। সেতুটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৬০ কি.মি. এবং এর প্রস্থ ১৬.৪৮ মিটার। সেতুটিতে পথচারী ও অযান্ত্রিক যানবাহনের জন্য বিশেষ লেন রয়েছে। বর্তমানে এটি খুলনার একটি দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। রাতে সেতুর উপর থেকে খুলনা শহরকে অপূর্ব সুন্দর মনে হয়। উৎসবের দিনগুলোতে এই সেতুতে তরুণ-তরুণীরা ভিড় করেন ও আনন্দ করেন। জাপানী সহায়তায় নির্মিত সেতুটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং উদ্বোধন করেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগমখালেদা জিয়া।
এর গোড়ায় দারুণ সুরক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। জাহাজের ধাক্কা থেকে সেতুর কাঠামো রক্ষার জন্য।
আজ আমাদের ভ্রমণের প্রথম দিন। উদ্দেশ্য হাড়বাড়িয়া ইকো পার্ক।


জাহাজ চলেছে তার আপন গতিতে। এখন ভাটার সময়। পানিতে বেশ টান। স্রোতের উল্টো পথে চলছি বলে জাহাজের গতিতে স্লথের রূপ এখন।

জাহাজ থেকে মাঝে মাঝে ঘোষণা দিয়ে বলছে সামনে কি কি দেখার জিনিস রয়েছে। আর আমরা পিপাসু হয়ে আছি নতুন দেখার জন্য।  যেতে যেতে হাতের বামপাশে অনেক  চুল্লী চোখের সামনে ভেসে আসছে। আমাদের দেখার সুবিধার জন্য জাহাজ নদীর পাড়ের কাছাকাছি দিয়ে চলছে। এটাই সেই বিতর্কিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র।
রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার রামপালে অবস্থিত একটি প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। … বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মিত হবে সুন্দরবনের থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তরে। সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পশুর নদীর তীর ঘেঁষে এই প্রকল্পে ১৮৩৪ একর জমির সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে
রামপাল

বিদ্যুৎ প্রকল্প বাংলাদেশের বাগেরহাট জেলার রামপালে অবস্থিত একটি প্রস্তাবিত কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র।  রামপালে ভারতের ন্যাশনাল থারমাল পাওয়ার কোম্পানির সঙ্গে যৌথভাবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (BPDB), ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে।  বিদ্যুৎ প্রকল্পটি নির্মিত হবে সুন্দরবনের থেকে ১৪ কিলোমিটার উত্তরে। সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে পশুর নদীর তীর ঘেঁষে এই প্রকল্পে ১৮৩৪ একর জমির সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। ২০১০ সালে জমি অধিগ্রহণ করে বালু ভরাটের মাধ্যমে নির্মানের কাজ শুরু করা হয়েছে।
২০১০ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বি.পি.ডি.বি.) এবং ভারতের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জাতীয় তাপবিদ্যুৎ কর্পোরেশন (এনটিপিসি) এর মধ্যে একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে সংস্থা দুটি ২০১৬ সালের মধ্যে এই প্রকল্পের বাস্তবায়ন করতে সম্মত হয়। ২৯ শে জানুয়ারী ২০১২ সালে, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড এনটিপিসি’র সাথে একটি বিদ্যুৎ কেন্দর নির্মাণের জন্য চুক্তি স্বাক্ষর করে। যৌথ উদ্যোগে তৈরি সংস্থা বাংলাদেশ ভারত বন্ধুত্ব শক্তি সংস্থা (বিআইএফপিসি) নামে পরিচিত। বিটিআরসি এবং এনটিপিসি ৫০:৫০ অংশিদারীত্বের ভিত্তিতে প্রকল্পের বাস্তবায়নে সম্মত হয়েছে। এনটিপিসি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন ও পরিচালনা করবে।বাংলাদেশ ও ভারত সমানভাবে এই প্রকল্পের মূলধনের ৩০ শতাংশ শেয়ার করবে। বাকি মূলধন, যা ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমতুল্য হতে পারে, তা এনটিপিসি থেকে সাহায্যের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করা হবে। বাংলাদেশ বিদ্যুৎ বিভাগের সূত্র মতে, যৌথ উদ্যোগ কোম্পানীটি একটি ১৫ বছর কর ছাড়ের সুবিধা ভোগ করবে।

পরিবেশগত সমস্যাসম্পাদনাকয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এই প্রকল্প পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নের নির্দেশিকা লঙ্ঘন করে। ২০১৬ সালে ইউনেস্কোর একটি প্রতিবেদনে বিদ্যুৎ কেন্দ্র ছাড়পত্রে পরিবেশগত প্রভাব মূল্যায়নকে সন্দেহজনক বলে অভিহিত করে, এবং প্রকল্পটিকে বন্ধ করার জন্য বলা হয়।

১ আগস্ট ২০১৩ সালে বাংলাদেশের পরিবেশ অধিদপ্তর (ডোই) বিদ্যুৎ কেন্দ্রের নির্মাণ অনুমোদন করে, কিন্তু তারপর বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর তার অবস্থান পরিবর্তিত করে এবং প্রকল্পটি নির্মানের জন্য ৫০ টি শর্ত জারি করে। কিন্তু সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অবস্থান মৌলিক পূর্বনির্ধারিত একটিকে শর্ত লঙ্ঘন করে। সাধারনত এই ধরনের প্রকল্পগুলো পরিবেশগত সংবেদনশীল এলাকার থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরত্বের বাইরে নির্মান করতে হয়।

পরিবেশবাদী কর্মীরা দাবি করেন যে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রস্তাবিত অবস্থান রামসার কনভেনশনের শর্ত তথা আইন লঙ্ঘন করবে। রামসর কনভেনশন, যা বাংলাদেশের একটি স্বাক্ষরকারী, জলাভূমি সংরক্ষণের জন্য একটি আন্তর্জাতিক পরিবেশ চুক্তি। সুন্দরবন রামসারের আন্তর্জাতিক গুরুত্বের জলাভূমিগুলির তালিকাতে রয়েছে।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য প্রতি বছর ৪.৭২ মিলিয়ন টন কয়লা আমদানি করতে হবে। এর জন্য ৮০,০০০ টন ক্ষমতার প্রায় ৫৯ টি বিশাল মালবাহী জাহাজের প্রয়োজন হবে এবং জাহজগুলিকে পশুর নদীর তীরে জাহাজ বন্দরে নিয়ে যাওয়া হবে। বন্দর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের মধ্য দিয়ে নদী পথে কয়লাবাহী জাহাজ চলাচল করবে এবং এর মধ্যে নদীর প্রবাহ পথও রয়েছে। পরিবেশবিদরাদের মতে এই কয়লা বহনকারী যানবাহন প্রায়ই আবৃত হয়, যার ফলে ফ্লাই অ্যাশ, কয়লা ধুলো এবং সালফার, এবং অন্যান্য বিষাক্ত রাসায়নিক বিশাল পরিমাণ ছড়িয়ে পড়ে প্রকল্প এলাকার আশেপাশে।

দেশের অনেক সামাজিক আর পরিবেশ আন্দোলন সংস্থা এটা বন্ধ করার জন্য আন্দোলনের ডাক দেয়। কিন্তু বাংলাদেশ আর ভারতীয় সরকারের তাদের ব্যক্তিগত সম্পর্ক আর স্বার্থে এসব আন্দোলন সরকার পাত্তা দেয়নি।  অদুর ভবিষৎ প্রজন্ম হয়তো এর জন্য অনেক কিছু হারিয়ে ফেলবে।

রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র অতিক্রম করার সামান্য কিছু এগিয়ে দেশের অন্যতম বিখ্যাত খুলনার মোংলা বন্দর।
মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুলনা বিভাগে অবস্থিত একটি সমুদ্র বন্দর। এটি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম এবং ২য় ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর। এটি খুলনা শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বন্দরটি ১ ডিসেম্বর, ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।

মোংলা বন্দর বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে খুলনা বিভাগে অবস্থিত একটি সমুদ্র বন্দর। এটি বাংলাদেশের ২য় বৃহত্তম এবং ২য় ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর। এটি খুলনা শহর থেকে ৪৪ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থিত। বন্দরটি ১ ডিসেম্বর, ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।এটি বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম নগর খুলনার সমুদ্র বন্দর এবং মোংলার কাস্টমস অফিস, প্রধান অফিস খুলনায় অবস্থিত। এটি খুলনার বন্দর বিধায় এটি খুলনা থেকে পরিচালিত হয়। এটি বাগেরহাট জেলার মংলা উপজেলার শেহলাবুনিয়া মৌজায় পশুর নদী ও মোংলা নদীর সংযোগস্থলে খুলনা বাগেরহাট সীমান্তে ভৌগোলিক ভাবে অবস্থিত। এটি পশুর নদী ও মংলা নদীর বঙ্গোপসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত। বর্তমানে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের পরেই বাংলাদেশের সব থেকে বড় এবং ব্যস্ততম সমুদ্র বন্দর হলো এটি। বঙ্গোপসাগর এর খুব কাছেই অবস্থিত বন্দরটি। পশুর নদীর গভীরতা এবং নাব্যতা অনেক বেশি থাকায় বিশাল আকারের মালবাহী সহ যেকোনো জাহাজ সহজে প্রবেশ কর‍তে পারে। অভ্যন্তরীণ নদী বন্দরসমূহ ও খুলনায় রেল টার্মিনালের সাথে সংযুক্ত।বর্তমানে খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত রেলপথ নির্মানের কাজ শেষের পথে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সামুদ্রিক বন্দর চট্টগ্রামের উপর চাপ বেড়ে যাওয়ায়, অনেক আন্তর্জাতিক জাহাজ কোম্পানি বিকল্প রুট হিসেবে মোংলা বন্দরকে বেঁছে নিয়েছে। এছাড়া প্রতিবেশী দেশ ভারত নেপাল ভুটানের সরকার মোংলা বন্দরকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে ব্যবহার করছে আঞ্চলিক বাণিজ্যিক পণ্য আদান প্রদানের ক্ষেত্রে। এছাড়া মোংলার কাছেই খান জাহান আলী বিমানবন্দর এবং রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বিভাগীয় নগরী খুলনা, মসজিদের শহর বাগেরহাট আছে বিধায় এটি খুব লাভজনক সমুদ্র বন্দরে পরিণত হয়েছে।

পূর্ব বাংলার দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলে সেবা দেয়ার জন্য ১৯৫০ সালে এই বন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। শুরুর দিকে এটি চালনা বন্দর নামে পরিচিত ছিল। ১৯৫০ সালে এটি প্রতিষ্ঠা লাভের পর চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ নামে একটি সরকারি অধিদপ্তর হিসাবে যাত্রা শুরু করে এবং মে ১৯৭৭ সালে, চালনা বন্দর কর্তৃপক্ষ নামক একটি স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি লাভ করে যা পুনঃরায় ১৯৮৭ সালের মার্চ মাসে নাম পরিবর্তনপূর্বক “মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ” হিসেবে যাত্রা শুরু করে।

ভৌগোলিক অবস্থানসম্পাদনাএই বন্দরটি চালনা থেকে পশুর নদীর ১১ মাইল (১৮ কিলোমিটার) উজানে গড়ে উঠে। ১৯৫০ সালের ১১ ডিসেম্বর বন্দরটি বিদেশি জাহাজ নোঙরের জন্য উন্মুক্ত হলে একটি ব্রিটিশ বণিক জাহাজ বন্দরে প্রথম নোঙ্গর করে। সমুদ্রগামী জাহাজ নোঙরের ক্ষেত্রে মোংলা অধিকতর সুবিধাজনক বিধায় ১৯৫৪ সালে বন্দরটি মোংলায় স্থানান্তরিত হয়। তখন মোংলা বন্দর দীর্ঘদিন ধরে চালনা নামেই পরিচিত হতে থাকে। পাকিস্তান আমলে একজন বন্দর পরিচালকের ওপর মোংলা বন্দরের প্রশাসনিক দায়িত্ব ন্যস্ত ছিল, যার প্রধান কার্যালয় ছিল খুলনা শহরে। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীরতা হারিয়ে ফেলায় পরবর্তী সময়ে, বিশেষ করে ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটি প্রায়ই বন্ধ করে দেওয়া হতো, এবং প্রতিবারই খননের পর এটি আবার জাহাজ নোঙরের জন্য উন্মুক্ত করা হতো। অত্যন্ত ব্যস্ততম পোর্ট এটা। নদীর বুকে অসংখ্য জাহাজ আর নৌকার বহর চলছে। দেশি বিদেশি জাহাজ বিভিন্ন মালামাল নিয়ে ছুটে আসছে কেউ বা যাচ্ছে। জাহাজের মাস্তলে পতপত করে উড়িয়ে চলছে জাহাজের দেশের পতাকা।  ভারত, জাপান বা ইটালির কয়েকটি জাহাজ আমাদের জাহাজের গা ঘেঁষে চল্লো।  ইতোমধ্যে দুপুর গড়তে শুরু করে দিয়েছে। রাজু ভাইয়ের মুখে শুনলাম আমাদের এখনো নাকি সাত আট ঘন্টার পথ বাকি আছে।  শুনেই তো গলা শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম। তবে মজার এই যাত্রায় সময় আর পথের হিসাব কারো কাছেই নাই। সুন্দরবন শুরু হতে আরো অনেক পথ বাকি।

আমরা রূপসা নদীর সীমানা থেকে এখন পশুর নদীর জলে ভাসছি। পশুর নদীর এত বিশালতা কখনো কল্পনায় ছিলো না।  এই নদী যেন শেষ হবার নয়। নদীর প্রস্ত ও কম নয় তবে মাঝে মাঝে কোথাও কোন সংকুচিত হয়ে গেছে নদীর বুক। এখন জোয়ার চলছে।

দেখতে দেখতে নদীর ধারে ঘন কালো জংগলের চিহ্ন শুরু হলো। কি যে সেই উন্মাদনায় মেতে উঠি আমরা এটা লিখে শেষ করার মতো নয়। সাকি ভাই  তাতা ভাই  রেজা ভাই , আর লাভলু ভাই আর তাসের টেবিলে বসে থাকতে পারলো না। সবাই তখন ডেকের উপর দাঁড়িয়ে অথবা ছাদের উপর।  ক্যাপ্টেন জানিয়ে গেল এই বন আর শেষ হবার নয়। আরও দুই দিন শুধু মাত্র এ-ই রকম বনের কোল ছুঁয়ে যাব আমরা।  উত্তেজনা আরও বেড়ে গেল। বন্ধু ভূপতি তো বলেই দিল বাঘের দেখা না পেলে আর ফিরে যাচ্ছি না। আমরা হো হো করে হেসে উঠি। সত্যিই তো বাঘ দেখার ভাগ্যবান হওয়া কম নয়।

পুরো সুন্দরবন নাকি এক মাস ঘুরে ও শেষ করা যাবে না। শুধু বাংলাদেশ অঞ্চলে যা আছে আর ভারতীয় দিকের কথা না বা বললাম। নদীর শেষ মাথায় বা কোন খান থেকে ভারতীয় সীমানা শুরু হয়েছে তা সহজে অনুমান করা অসম্ভব।

বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে “সমুদ্র বন” বা “চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)” (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে। তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে।

সুন্দরবন হলো বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলির অন্যতম হাজার বছর ধরে তিলে তিলে গড়ে উঠা । পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকার বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলা এবং ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের দুই জেলা উত্তর চব্বিশ পরগনা ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জুড়ে বিস্তৃত।

সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে  এবং বাকি অংশ রয়েছে ভারতের মধ্যে।
এভাবে একসময় আন্তর্জাতিক অংগনে বহুকাল পরে হলেও স্বীকৃতি পেয়েছে অবশেষে
৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বস্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে; যথাক্রমে ‘সুন্দরবন’ ও ‘সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান’ নামে। এই সুরক্ষা সত্ত্বেও, আইইউসিএন রেড লিস্ট অফ ইকোসিস্টেম ফ্রেমওয়ার্কের অধীনে ২০২০ সালের মূল্যায়নে ভারতীয় সুন্দরবনকে বিপন্ন বলে মনে করা হয়েছিল।  সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল।
সমুদ্র আর নদীর জল সুন্দরবন এর বুকের ভিতর দিয়ে অজস্র খাল বা ছোট ছোট নদীর মতো আলাদা করে ফেলেছে পুরো বনাঞ্চলগুলোতে।
আমরা যতই এগিয়ে যাচ্ছি বনের ঘনত্ব বাড়তে আরম্ভ হলো। জাহাজের গতি ও বেশ। আমাদের হাতের বামেই মূল বনাঞ্চল।

বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ১০৬ বাঘ ও ১০০০০০ থেকে ১৫০০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়।
ভীষণ শান্ত আর ছমছমে রহস্যময়তা যেন নদীর ধারে।
জোয়ার ভাটার খেলাটা এক অন্যরকম বিষয়। জংগলের অনেক উপরে পানি চলে আসে জোয়ারের সময়। খুব মনোযোগ ঢেলে দিয়ে সবাই চোখ ফেলে রেখেছি বনের ভিতর।  খুব সামান্যই প্রানী চোখে পড়ে আমাদের। মাঝে মাঝে ছোট নৌকা করে মধু সংগ্রহ আর মাছ শিকার করছে অল্প কিছু মানুষ। তার সে সংখ্যা নগন্ন। দূর থেকে গাছের নাম না জানা বা চেনা গেলে ও এখানে সুন্দরী গাছের আধিপত্য অনেক।

সর্বাধিক প্রচুর গাছের প্রজাতি হল সুন্দরী (Heritiera fomes) এবং গেওয়া (Excoecaria agallocha)। বনে ২৯০ টি পাখি, ১২০ টি মাছ, ৪২ টি স্তন্যপায়ী, ৩৫ টি সরীসৃপ এবং আটটি উভচর প্রজাতি সহ ৪৫৩ টি প্রাণী বন্যপ্রাণীর বাসস্থান সরবরাহ করে।

মাছ এবং কিছু অমেরুদণ্ডী প্রাণী ছাড়া অন্য বন্যপ্রাণী হত্যা বা দখলের উপর সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও, মনে হচ্ছে বিংশ শতাব্দীতে হ্রাসপ্রাপ্ত জীববৈচিত্র্য বা প্রজাতির ক্ষতির একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ প্যাটার্ন রয়েছে, এবং বনের পরিবেশগত গুণমান হ্রাস পাচ্ছে।পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন জাতীয় উদ্যানের প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বন অধিদপ্তর। বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালে বন সংরক্ষণের জন্য একটি বন চক্র তৈরি করা হয় এবং এরপর থেকে প্রধান বন সংরক্ষক দের নিযুক্ত করা হয়েছে। উভয় সরকারের কাছ থেকে সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও, সুন্দরবন প্রাকৃতিক এবং মানবসৃষ্ট উভয় কারণে হুমকির মুখে রয়েছে। ২০০৭ সালে ঘূর্ণিঝড় সিডরের ভূমিধ্বসের কারণে প্রায় ৪০% সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি এবং স্বাদুপানির সরবরাহ হ্রাসের কারণে বনটি বর্ধিত সালিনিটিতেও ভুগছে। আবার ২০০৯ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আইলা ব্যাপক হতাহতের সাথে সুন্দরবনকে বিধ্বস্ত করে। এই ঘূর্ণিঝড়ে কমপক্ষে ১,০০,০০০ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রস্তাবিত কয়লা চালিত রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র টি বাংলাদেশের খুলনার বাঘেরহাট জেলার রামপাল উপজেলায় সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার (৮.৭ মাইল) উত্তরে অবস্থিত, ইউনেস্কোর ২০১৬ সালের একটি প্রতিবেদন অনুসারে এই অনন্য ম্যানগ্রোভ অরণ্যের আরও ক্ষতি করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

ইতিহাসের পাতা থেকে জানা যায় যে,
মুঘল আমলে (১২০৩-১৫৩৮) স্থানীয় এক রাজা পুরো সুন্দরবনের ইজারা নেন। ঐতিহাসিক আইনি পরিবর্তনগুলোয় কাঙ্ক্ষিত যেসব মৌলিক পরিবর্তন হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে বিশ্বের প্রথম ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে স্বীকৃতি পেয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক তত্ত্বাবধানের অধীনে আসা। ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি কর্তৃক মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আলমগীর এর কাছ থেকে স্বত্বাধিকার পাওয়ার পরপরই সুন্দরবন এলাকার মানচিত্র তৈরি করা হয়। বনাঞ্চলটি সাংগঠনিক ব্যবস্থাপনার আওতায় আসে ১৮৬০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে ভারতের তৎকালীন বাংলা প্রদেশে বন বিভাগ স্থাপনের পর থেকে।

অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুতে সুন্দরবনের আয়তন বর্তমানের প্রায় দ্বিগুণ ছিল। বনের উপর মানুষের অধিক চাপ ক্রমান্বয়ে এর আয়তন সংকুচিত করেছে। ১৮২৮ সালে ব্রিটিশ সরকার সুন্দরবনের স্বত্ত্বাধীকার অর্জন করে। এল. টি হজেয ১৮২৯ সালে সুন্দরবনের প্রথম জরীপ কার্য পরিচালনা করেন। ১৮৭৮ সালে সমগ্র সুন্দরবন এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসাবে ঘোষণা দেয়া হয়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগের সময় সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার বাংলাদেশ অংশে পড়ে। যা বাংলাদেশের আয়তনের প্রায় ৪.২% এবং সমগ্র বনভূমির প্রায় ৪৪%।

সুন্দরবনের উপর প্রথম বন ব্যবস্থাপনা বিভাগের আইনগত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয় ১৮৬৯ সালে। ১৯৬৫ সালের বন আইন (ধারা ৮) মোতাবেক, সুন্দরবনের একটি বড় অংশকে সংরক্ষিত বনভূমি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় ১৮৭৫-৭৬ সালে। পরবর্তী বছরের মধ্যেই বাকি অংশও সংরক্ষিত বনভূমির স্বীকৃতি পায়। এর ফলে দূরবর্তী বেসামরিক জেলা প্রশাসনের কর্তৃত্ব থেকে তা চলে যায় বন বিভাগের নিয়ন্ত্রণে। পরবর্তীকালে ১৮৭৯ সালে বন ব্যবস্থাপনার জন্য প্রশাসনিক একক হিসেবে বন বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়, যার সদর দপ্তর ছিল খুলনায়। সুন্দরবনের জন্য ১৮৯৩-৯৮ সময়কালে প্রথম বন ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণিত হয়।

১৯১১ সালে সুন্দরবনকে ট্র্যাক্ট আফ ওয়াস্ট ল্যান্ড হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়, যা না তো কখনো জরিপ করা হয়েছে আর না তো কোনদিন শুমারীর অধীনে এসেছে। তখন হুগলী নদীর মোহনা থেকে মেঘনা নদীর মোহনা পর্যন্ত প্রায় ১৬৫ মাইল (২৬৬ কি.মি.) এলাকা জুড়ে এর সীমানা নির্ধারিত হয়।

পুরো পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ তিনটি ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চলের একটি হিসেবে গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান যথেষ্ট জটিল। দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ এবং ভারত জুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবনের বৃহত্তর অংশটি (৬২%) বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে অবস্থিত।

দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর; পূর্বে বলেশ্বর নদী আর উত্তরে বেশি চাষ ঘনত্বের জমি বরাবর সীমানা। উঁচু এলাকায় নদীর প্রধান শাখাগুলো ছাড়া অন্যান্য জলধারাগুলো সর্বত্রই বেড়িবাঁধ ও নিচু জমি দ্বারা বহুলাংশে বাঁধাপ্রাপ্ত।

প্রকৃতপক্ষে সুন্দরবনের আয়তন হওয়ার কথা ছিল প্রায় ১৬,৭০০ বর্গ কি.মি. (২০০ বছর আগের হিসাবে)। কমতে কমতে এর বর্তমান আয়তন হয়েছে পূর্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশের সমান। বর্তমানে মোট ভূমির আয়তন ৪,১৪৩ বর্গ কি.মি. (বালুতট ৪২ বর্গ কি.মি.-এর আয়তনসহ) এবং নদী, খাঁড়ি ও খালসহ বাকি জলধারার আয়তন ১,৮৭৪ বর্গ কি.মি.। সুন্দরবনের নদীগুলো নোনা পানি ও মিঠা পানি মিলন স্থান। সুতরাং গঙ্গা থেকে আসা নদীর মিঠা পানির, বঙ্গোপসাগরের নোনা পানি হয়ে ওঠার মধ্যবর্তী স্থান হলো এ এলাকাটি। এটি বাংলাদেশে সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পটুয়াখালী ও পশ্চিমবঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা জেলা জুড়ে রয়েছে। বাংলাদেশে দক্ষিণ পশ্চিমে ও ভারতে দক্ষিণ পূর্বে সুন্দরবন অবস্থিত।

হাজার বছর ধরে বঙ্গোপসাগর বরাবর আন্তঃস্রোতীয় প্রবাহের দরুন প্রাকৃতিকভাবে উপরিস্রোত থেকে পৃথক হওয়া পলি সঞ্চিত হয়ে গড়ে উঠেছে সুন্দরবন। এর ভৌগোলিক গঠন ব-দ্বীপীয়, যার উপরিতলে রয়েছে অসংখ্য জলধারা এবং জলতলে ছড়িয়ে আছে মাটির দেয়াল ও কাদা চর। এতে আরো রয়েছে সমুদ্র সমতলের গড় উচ্চতার চেয়ে উঁচুতে থাকা প্রান্তীয় তৃণভূমি, বালুতট এবং দ্বীপ, যেগুলো জুড়ে জালের মত জড়িয়ে আছে খাল, জলতলের মাটির দেয়াল, আদি ব-দ্বীপীয় কাদা ও সঞ্চিত পলি। সমুদ্রসমতল থেকে সুন্দরবনের উচ্চতা স্থানভেদে ০.৯ মিটার থেকে ২.১১ মিটার।

জৈবিক উপাদানগুলো এখানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে সামুদ্রিক বিষয়ের গঠন প্রক্রিয়া ও প্রাণী বৈচিত্র্যের ক্ষেত্রে। সৈকত, মোহনা, স্থায়ী ও ক্ষণস্থায়ী জলাভূমি, কাদা চর, খাঁড়ি, বালিয়াড়ি, মাটির স্তূপের মত বৈচিত্র্যময় অংশ গঠিত হয়েছে।

সুন্দরবনের প্রধান বনজ বৈচিত্রের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সুন্দরী,গেওয়া, ঝামটি গরান এবং কেওড়া। ১৯০৩ সালে প্রকাশিত প্রেইন এর হিসেব মতে সর্বমোট ২৪৫টি শ্রেণী এবং ৩৩৪টি প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে।

ব-দ্বীপিয় নয় এমন অন্যান্য উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ বনভূমি এবং উচ্চভূমির বনাঞ্চলের তুলনায় বাংলাদেশের ম্যানগ্রোভ বনভূমিতে উদ্ভিদ জীবনপ্রবাহের ব্যাপক পার্থক্য রয়েছে। পূর্ববর্তীটিরউদ্ভিদ জীবনচক্রের ভিন্নতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে উত্তর-পূর্বে বিশুদ্ধ পানি ও নিম্ন লবণাক্ততার প্রভাব এবং পানি নিষ্কাশন ও পলি সঞ্চয়ের ভিত্তিতে।

সুন্দরবনকে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়েছে একটি আর্দ্র গ্রীষ্মমন্ডলীয় বনভূমি হিসেবে যা গড়ে উঠেছে সুগঠিত সৈকতে কেওড়া (Sonneratia apetala) ও অন্যান্য সামুদ্র উপকূলবর্তী বৃক্ষ প্রধান বনাঞ্চলে। ঐতিহাসিকভাবে সুন্দরবনে প্রধান তিন প্রকারের উদ্ভিদ রয়েছে যাদের চিহ্ণিত করা হয়েছে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা, স্বাদু পানি প্রবাহের মাত্রা ও ভূপ্রকৃতির মাত্রার সাথে সম্পর্কের গভীরতার উপর ভিত্তি করে।

সাম্প্রতিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে বিচিত্র জীববৈচিত্র্যের আধার বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাজাতির আবাসস্থল। এ থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বড় অংশ বিদ্যমান (যেমনঃ ৩০ শতাংশ সরীসৃপ, ৩৭ শতাংশ পাখি ও ৩৭ শতাংশ স্তন্যপায়ী) এবং এদের একটি বড় অংশ দেশের অন্যান্য অংশে বিরল।সরকারের মতে এই প্রানীবৈচিত্র্যের মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তনপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে।

স্থানীয় মানুষদের মুখে ও শোনা কথা যে, এখানে আগে যে বাঘের আধিক্য ছিলো তা আর নেই। জলদস্যু, খাদ্যের অভাব, গাছের সংখ্যা দিন দিন কমে যাওয়ার মতো অজস্র কারনে বহুদিন নাকি আর বাঘ দেখার সৌভাগ্য অনেক মানুষের হয়নি।

২০০৪ সালের হিসেব মতে, সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ।  এসব বাঘ উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০ জন, মেরে ফেলার কারণে ব্যপকভাবে পরিচিত। মানুষের বাসস্থানের সীমানার কাছাকাছি থাকা একমাত্র বাঘ নয় এরা। বাঘের অভায়ারণ্যে চারপাশ ঘেরা বান্ধবগড়ে, মানুষের উপর এমন আক্রমণ বিরল। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতীয় অংশের সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে একটিও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের সুন্দরবনে ১৯৮১ খ্রিষ্টাব্দ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত কালপরিধিতে অর্ধাশতাধিকের বেশি বাঘ মানুষের হাতে মারা গেছে।
স্থানীয় লোকজন ও সরকারীভাবে দায়িত্বপ্রাপ্তরা বাঘের আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বিভিন্ন নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিয়ে থাকেন। স্থানীয় জেলেরা বনদেবী বনবিবির প্রার্থণা ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করে যাত্রা শুরুর আগে। সুন্দরবনে নিরাপদ বিচরণের জন্য প্রার্থণা করাও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর কাছে জরুরি। বাঘ যেহেতু সবসময় পেছন থেকে আক্রমণ করে সেহেতু জেলে এবং কাঠুরেরা মাথার পেছনে মুখোশ পরে। এ ব্যবস্থা স্বল্প সময়ের জন্য কাজ করলেও পরে বাঘ এ কৌশল বুঝে ফেলে এবং আবারও আক্রমণ হতে থাকে। সরকারি কর্মকর্তারা আমেরিকান ফুটবল খেলোয়াড়দের প্যাডের মত শক্ত প্যাড পরেন যা গলার পেছনের অংশ ঢেকে রাখে। এ ব্যবস্থা করা হয় শিরদাঁড়ায় বাঘের কামড় প্রতিরোধ করার জন্য যা তাদের পছন্দের আক্রমণ কৌশল।

দুপুরের খাবারের টেবিলে রাজু ভাই পরিচয় করে দিল পারশে মাছের। অনেক বিখ্যাত এখানে স্বাধ ও চমৎকার। ইদানীং তার ও টান পড়ে গেছে কিন্তু আমাদের জন্য তারা সংগ্রহ করে রেখেছেন আগেই তাই খাবার টেবিলে দেখা মিলেছে।

সুন্দরবনের সবচেয়ে পরিচিত মাছ পারশে মাছ। ১৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা এ মাছটি জঙ্গলের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। এখনো পাওয়া যায় খুব কম। পারশেরই জাতভাই বাটা ভাঙান। ভাঙান, গুল বাটা, খরুল ভাঙান আজকাল খুব কম ধরা পড়ে। খরশুলা বা খল্লা অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ; বনের নদী-খালে এদের তেমন আর দেখতে পাওয়া যায় না।

দিনের আলো কমতে শুরু হলো। আমরা প্রায় আট ঘন্টার পথ পেরিয়ে আমাদের প্রথম হাড়বাড়িয়া ইকো পার্ক এর খুব কাছাকাছি চলে এসেছি। এখানে সব জায়গায় আপনি নামতে পারবেন না নিরাপত্তার অজুহাতে। তাই সরকার অনুমোদন করে দিয়েছে। আমাদের দুজন গান ম্যান অস্ত্র নিয়ে রেডি হয়ে আমাদের কিছু টিপস দিচ্ছিলেন।

জাহাজের ক্যাপ্টেন ও কম বললেন না, কিভাবে হাটব, কিভাবে কথা বলব, চুপচাপ, নিঃশব্দে, প্রানীকে বিরক্ত করা যাবে না, গাছের পাতা ছোয়া যাবেনা, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের জাহাজ মাঝ নদীতে দাঁড়িয়ে গেল। এবার সবাই আস্তে আস্তে করে নৌকার উপর বসে যাবেন, নড়াচড়া করতে বারণ করছেন। বিপত্তি টা এখানেই। আমাদের ধারণা ছিলো আমরা আমাদের জাহাজ থেকে সোজা বনের পাড়ে নামতে পারব কিন্তু একি প্রায় আধা কিমি দূরের এই উত্তাল ঢেউ মাড়িয়ে নৌকায় উঠে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। একদম থমকে গেলাম আবারও। আবারও চ্যালেঞ্জ। কিন্তু এই মাঝপথে এসে সুন্দরবন এর মাটির উপর স্পর্শ করতে পারব না এটা ভাবতে পারি না। যাইহোক আল্লাহর উপর ভরসা করে নৌকায় উঠে পড়ি। প্রায় আধা কিমি জল পেরিয়ে সেখানে যেতে হবে। আমাদের মতো ভীতু মানুষের জন্য সেটা বিশাল দূরের মতো। আরিফ আর রিজভী কখনো বসে আবার উঠে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আচ্ছা করে গালাগাল করেছি আমি সহ আরো কেউ কেউ। তারা বন্ধু বলে সেই অধিকার আমার আছে। কিন্তু কে শোনে কার কথা। তাদের এই বেশি নড়াচড়া করা র ফলে নৌকার দোলানী যখন খুব বেড়ে যায় বাধ্য হয়ে তারা সুবোধ বালকের মতো বসে পড়ে। বিপদের মুখে চঞ্চলতা করতে নেই। আর জলের বুকে তো নয়ই। আমি বারবার মনে মনে আল্লাহর সাহায্য চাইতে থাকি। যাইহোক মিনিট কয়েক এর ভিতর আমরা প্রথম জল ছেড়ে ডাংগায় আসি। সামনের অংশে একটা বড় সাইনবোর্ডে বিস্তারিত বলা আছে। চোখের পলকে পড়ে নিয়ে এগিয়ে যাই। আট দশটি বানর আর তাদের বাচ্চাদের ব্যস্ততা চলছে। মানুষ তাদের খেতে দিচ্ছেন। বানরদের ব্যস্ততা চলছে ব্যাপক। আমাদের গাইড রাজু ভাই, আবারও একটা এনাউন্স করে দিলেন, জাহাজে যা যা বলেছেন তার পুনরাবৃত্তি।

প্রায় ৬৬ জন মানুষ মানে আধা কিমি মানুষের লাইন। ঘন বনের ভিতর দিয়ে কাঠের তক্তা বসিয়ে ব্রিজ করা হয়েছে। সুনশান ঘুমন্ত নিরবতা। সবার চোখ পড়ে আছে বনের ঘন জংগলের ভিতর। হরিণ বা অন্য কিছু দেখা যায় কি না। এত মানুষের পায়ের জুতার থপথপ, কটকট শব্দ বনের নির্জনতা ভেংগে চুরমার হওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিলো। তবে সেই নির্জনতা কিন্তু অন্য রকমের একটা অনুভূতির জন্ম দেয়। মনে হচ্ছিল আমরা বহু প্রাচীন কোন নগরীর ভিতর দিয়ে চলছি। একদমই ভয়ংকর রকমের পথ ছিলো এটা। প্রায় দুই কিমি মতো ব্রিজের রাস্তা। জোয়ারের সময় এখানে জল চলে আসে। মাটিতে কাদা পানিতে হরিণের পায়ের ছাপ অগুনিত। আর গুই সাপ বা আরও কত প্রানীর পায়ের ছাপাতে পরিপূর্ণ। লাল কাকড়ার দল সারি বেধে ছুটে চলছে। দেখতে খুবই সুন্দর কিন্তু খুব বিষাক্ত বলে জানি সেই কারণে এগুলো ধরার দুঃসাহস আর পাইনি।

হাড়বাড়িয়া  ইকো-পর্যটন কেন্দ্র, চাঁদপাই রেঞ্জ, সুন্দরবন, বাগেরহাট। খুলনা থেকে ৭০ কিলোমিটার এবং মংলা বন্দর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে এই কেন্দ্রে অবস্থান।  দেশি পর্যটক ৭০ ৳, বিদেশি পর্যটক ১০০০৳। (হালনাগাদের তারিখ জুলাই ২০১৯। আমরা যত ভিতরে যাচ্ছি বনের ঘনত্ব বাড়তে আরম্ভ হলো। অজানা আর অদ্ভুত রকমের অগুনিত গাছ গাছালী, আগাছা, ছত্রাক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ব্রিজ ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে গোলপাতা গাছের সারি। গাছের বুক চিরে তার নারিকেলের মতো ফলের ছড়া। আর সেগুলো নিয়ে টানাটানি করছে কয়েকটি কাঠবিড়ালি।  আমাদের বারবার সর্তক করে দিচ্ছেন যেন আমাদের কেউ কোন গাছের পাতা, কান্ড হাত দিয়ে না ছুই বা কোন ফল ভক্ষণ করি। এত পরিমান গাছ আর এত প্রকার এটা কারো পক্ষে জানা অসম্ভব। এই ঘন বনের ভিতর দিয়ে সরু পথ দিয়ে হেটে চলার সময় মনের ভিতরে একটা নির্জনতা কাজ করা শুরু হয়েছে।  ভয় ও ছিলো প্রচুর। বাঘ না থাকুক কিন্তু বিষাক্ত সাপ বিচ্ছু আর কত রকমের নাম না জানা প্রানীর এই আবাসস্থল। এখানে যে প্রচুর হরীণ আছে তা কাদামাটির উপর তার পায়ের ছাপ অগুনিত দেখে সহজেই অনুমান করা যায়।  জোয়ারের সময় পানি চলে আসে বনের ভিতর। ভাটার সময় আবারও পানি সরে গেলে কাদামাটির উপর নানান প্রানী চলাচল করে যার স্পষ্ট ছাপ দেখতে পাওয়া যায়। বহুদিন আগে বাঘ এখানে এসেছিল বলে জানতে পারি। মানুষের আনাগোনা এখন অনেক খানি বেড়ে যাওয়ার ফলে তেমন কোন প্রানীর দেখা আর পাওয়া যায় না। সবাই মানুষের শব্দ শোনামাত্র ভয়ে গভীর বনে চলে যায়। মাত্র দু এক একটা হরীণ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমাদের। মাঝে মাঝে গাছের ঘনত্ব এতো বেশি যে হয়তো বহুকাল সূর্য ও তার তাপ সেই মাটিতে পড়েনি। বেলা গড়িয়ে এসেছে,  বনের ভিতর রোদের দেখা পাওয়া কপালের ব্যাপার। গাছের ডাল বা পাতার ফাঁকে রোদের কিছু ছিটেফোঁটা আসে মাত্র। অনেক শীতল বনের ভিতর।  একসময় ব্রীজের শেষ মাথায় এসে পড়ি। সামনে বিরাট পুকুর স্বাদু পানির।  রাতের বেলা বনের হরীণ আর অন্য প্রানীরা চলে আসে পানি পান করতে। পুরো পুকুরে ভরে আছে গোলাপি শাপলা আর পদ্মফুলে। অনেক সুন্দর লাগলো দেখতে। আমরা একেবারে আবারও নদীর ঘাটে চলে এলাম। আমাদের অপর পারের বন আরও সুন্দর। শুনেছি প্রচুর হরীণ আছে সেখানে। আমারা সেখানে যাওয়ার পথে বেশ কিছু বানর আর লাজুক হরিণ দেখতে পেলাম। নৌকায় উঠে চলে যাই কটকা ফরেস্ট অফিসে। সেখানে প্রচুর হরীণ আর বানর দেখতে পেলাম। চারপাশে চরিয়ে বেড়াচ্ছে অজস্র হরিণ। আর এর এক পাশ দিয়ে কাঠের তক্তা বিছিয়ে ব্রিজ গড়ে তোলা হয়েছে মানুষের চলাচলের জন্য। জোয়ারের সময় পানি চলে আসে এখানে। পুরো টাই বালুর দ্বীপের মতো। বালুতে আটকে আছে শামুকভাঙা আর ঝিনুক। আমাদের সাথে থাকা ছোট বাচ্ছারা সেগুলো কুড়িয়ে নিচ্ছিল।

প্রায় সাড়ে চারটা বাজে। এখানে টাওয়ার থাকলেও কোন কাজের নয়। আমরা এখন মোবাইল নেটওয়ার্ক এর বাহিরে চলে যাচ্ছি। আর কিছুটা বাদ কোন নেটওয়ার্ক থাকবে না তবে মাঝে মাঝে টেলিটক থাকতে পারে। আমি ডাক্তার মনিরের কাছে এই বিষয় টা আগেই জেনেই বলে আসার সময় টেলিটক সীম নিয়ে এসেছি। তাই খুব একটা ব্যাঘাত ঘটেনি। তবে আমরা রাতে আজ যখন সমুদ্রের বুকে রাত্রি যাপন করবে আমাদের জাহাজ তখন একেবারেই আর নেটওয়ার্ক থাকবে না। এই বিষয় টা অনেকেই জানত না।
নদীর জল শান্ত সুবোধ কিন্তু সমুদ্রের উপর দাঁড়িয়ে আছে আমাদের জাহাজ। সেখানে ঢেউ কিন্তু কম নয়। সমুদ্র থেকে নদীর একটা অংশ হাড়বাড়িয়া ইকো পার্ক এর সামনে দিয়ে বনের অনেক ভিতরে চলে গেছে। আমরা সমুদ্র আর নদীর ধারে এসে নেমে পড়েছি। স্থানীয় ভাবে এটাই কটকা খাল বলে খ্যাত।  ইতোমধ্যে সবাই বাড়ির সাথে যোগাযোগ করতে চেষ্টা করে ও আর পারছে না। ইতোমধ্যে সন্ধ্যা হয়ে গেছে আমরা সবাই নৌকায় উঠে পড়ি সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ছে তখন। উথাল-পাতাল ঢেউ মাড়িয়ে আবারও ফিরে আসি জাহাজের উপর। যেন প্রান ফিরে আসে আরেকবার। কমবেশি সবাই তখন ক্লান্ত হয়ে গেছে। যার যার কেবিনে গিয়ে রেস্ট নিতে থাকি। জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকি আরেকটা সূর্য কে সমুদ্রের বুকে হারিয়ে যেতে। রাতের বেলা। আমাদের জাহাজ তখন একেবারে সমুদ্রের বুকে। এভাবেই সমুদ্রের উপর দিয়ে চলতে আনুমানিক রাত বারোটা নাগাদ আমরা হাজির হব কটকা নামক একটি নতুন দ্বীপের কাছে। রাতে তার পাশের সমুদ্রের উপর দাঁড়িয়ে থাকবে জাহাজ বাকি রাত। তারপর সকাল হলে নতুন যাত্রা শুরু করব। আগামীকাল ব্যস্ত সিডিউল আমাদের। কাল থেকে ভালো ঘুম ও হয়নি। কিন্তু তার আর উপায় কই। আমার কেবিন ছিলো নিচ তলায়। রাতের খাবার টা ভীষণ মানসন্মত আর রুচিশীল আজ। বড় বড় গলদা চিংড়ি আর নাম না জানা ছোট মাছের হালকা ঝোল মাখানো। সাথে মুগের ডাল আর সবজি। পেট পুরে খেলাম। রাত নয় টার দিকে খাওয়া দাওয়া করে চলে এলাম কেবিনে। আরিফ আর শফি কামাল নানান রসের গল্পে মেতে থাকি সময় টা। এই গল্পের আর শেষ নাই। পারভেজ ভাই কি কারিশমায় দোতলার হাতের বামের সিংগেল কেবিন টা পেয়ে গেল তার রম্য বিশ্লেষণ চলতে থাকে। সেই মুহূর্তে বন্ধু ভূপতি এসে গল্পের মাত্রায় আরও রস বাড়িয়ে দেয়। পারভেজ ভাই তার ভাতিজা চাচা সম্পর্ক। সারাটা রাস্তা পারভেজ ভাইকে ভূপতি জব্দ করেছে। আমরাও কম যাইনি। উনি দারুণ মিশুক আর লম্বা দাড়ির হাল আমলের যুবক সাজতে তার আপ্রাণ চেষ্টা। পরনে বেশিরভাগ সময় বাহারী ট্রাউজার। এই নিয়ে আমরা জব্দ করি  উনিও আমাদের কথায় হাসি দিয়ে উড়িয়ে দিয়ে চলেছেন। ভাবীকে বরাবর উনি সাথে সাথে নিয়ে ঘুরতে যান কিন্তু এবারে তার ব্যতিক্রম কেন? কিভাবে তিনি একাই সবচেয়ে ভালো কেবিন টা হাসিল করেছে?  এর পিছনে কার ষড়যন্ত্রের হাত?  ভূপতি বলেই দিল, রংপুরে গিয়ে তার বিশদ তদন্ত হবে। আর ভূপতি হবে তার প্রধান, আর আমরা সদস্য সেই তদন্ত কমিটির। এই নিয়ে হাসি তামাশা চলছিলো। রাত ১০ টার দিকে দোতলায় ডাইনিং রুমে মাইকে গানের শব্দ আর সুন্দরী ললনাদের ঠোঁটের ফাকের হাসি ঘুম কেড়ে নিল আমাদের। বাধ্য হয়ে দোতলায় ডাইনিং রুমে চলে যাই। বাহ বেশ আয়োজন দেখছি। গিটারে ভূপতির বোনের মেয়ে জয়ীতা   চমৎকার গাইতে পারে। মুগ্ধ হয়ে এককোনায় একটা চেয়ারে বসে শুনতে থাকি। এরপর ধীরে ধীরে আমাদের হোম সিংগার রা এগিয়ে এলো। হিন্দি গান আর বাহারি মিউজিক। সাথে আরিফা , রোজী  , আর ধীনার    চমৎকার তাল লয় হীন ড্যান্স। রেশমা এই নাট্যমঞ্চ এড়াতে কি এক অজুহাতে কেবিনে শুয়ে ছিলো , কেউ কেউ তাকে খুজতে থাকে কিন্তু সে আর বাকি সময় এলো না।  এই ঘনো জংগলের মাঝে আর সমুদ্রের উথাল পাথাল জল রাশির বুকে এটাই কম নয়। রেজা ভাইয়ের স্ত্রী। বুঝতে পারলাম নাচ বা গানে ওনার ও একটা নেশা আছে। গানের আর নাচের তাল সহ্য করতে না পেরে উনি ও কোমরে শাড়ি বেধে নেমে পড়লেন এই মঞ্চে। রুহুল ভাইয়ের অপেশাদারি উপস্থাপন, ধরে রাখেন পুরো কর্মযজ্ঞ। হিরু ভাই দুটো ভাওয়াইয়া গান ধরলেন অবশেষে। সাথে হাত পা ছড়ানো কিছু ব্যায়াম টাইপের ড্যান্স। একটা সময় বাধ্যতামূলক করা হলো সংগীতশিল্পী ঘাটতি দেখে। শিরিন আপা পুরনো শিল্পী। তবে আজকাল আর গান গাওয়া হয়না। তবুও মাউথ পিস হাতে খানিকটা গাইলেন। একে একে সবার পালা চলে আসছে। পালানোর উপায় আর কারো ছিলো না।  সাকি ভাই তার বাল্যের বয়স টা ধরে নিয়ে রোজীর সাথে ঘনো ড্যান্স দিতে গিয়ে শেষ মেশ হাপিত্যেশ করা ছাড়া আর উপায় ছিলো না। এখন আর নেটওয়ার্ক এক বিন্দুও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

রাত এগারো টা প্রায়। মোটামুটি অনেকে তাদের পারফর্মেন্স দেখিয়ে বিদায় নিচ্ছেন। আমি বরাবরই এসব অবজ্ঞা পোষণ করে থাকি। হই হুল্লোড়ে আমার মন টানে না। তবে রোমান্টিক ভীষণ। এটা আমার বন্ধুদের জানা আছে। আমি চাইছিলাম যেন আমাকে না ডাকে। রুহুল ভাইয়ের চোখ এড়ানো যায় নি। মাঝে আরও দুবার আমাকে সামনে আসতে বললেন। আমি চুপচাপ হয়ে থাকি। কিন্তু বাধ সেধেছিল তাতা ভাই। হাতে তাসের বান্ডিল। একটা করে চাল দিচ্ছিলেন আর আমার নাম ঘোষণা দিতে রুহুল ভাইকে বলতে থাকেন। আর উপায় দেখিনা। আমি প্রথমেই ক্ষমা চেয়ে নিলাম।

সবাই জানে আমি কবিতা লিখি। সবাই চাইছে আমি যেন কিছু শোনাই। বললাম খুব ইচ্ছে ছিলো আপনাদের কবিতা পড়ে শোনাব কিন্তু নেটওয়ার্ক নাই। তাই আর পারছি না। আগামীকাল মিস হবে না। আমার দুটো লাইন ছাড়া আর কোন মুখস্থ নেই।

তুই ভেবেছিস তোর জন্য আমি পথ চেয়ে আছি?

তুই ছেড়ে গেলে আমি হাফ ছেড়ে বাঁচি।

এই লাইন দুটো শুনে হাসির রোল পড়ে যায়। মিসেস রেজা ভাবি, আমাকে বললেন  ও ছেলেরা তাহলে এমনিই?

আমি হেসে উড়ে দিলাম। মাইদুল, আবু বক্কর, দারুণ আমুদে ছেলে। অন্তত আপ্যায়িত করার জন্য এদের তুলনা হয় না। বড় ভাই আর সিনিয়রদের কি চাই শুধু বলার যা সময়। দেখবেন হাজির হয়ে আসে। লানজু বরাবর শান্ত সুবোধ বালকের মতো আজও। আর স্বভাবসুলভ রায়হান তার ব্যাচের বন্ধুদের নিয়ে মেতে আছে কখনো তাসে নয়তো আলাপের ডালি সাজিয়ে। পারভেজ ভাই সবার বন্ধু যেন। দারুণ মিশতে পারেন। কি সিনিয়র কি জুনিয়র। তার জুড়ি নেই এই নিয়ে। আর ভাবি কে এই যাত্রায় সাথে না নিয়ে এসে তিনি যেন আরো তরুণ আর অপ্রতিরোধ্য আজ। ধীরেন্দ্র নাথ দাদা। এতো আমুদে আর ভ্রমণ পিপাসুদের প্রথম সারির মানুষ তা এই যাত্রায় সাথে না থাকলে বুঝতে পারতাম না। সাহিত্য অনুরাগী মানুষ, খুটে খুটে জেনে নিচ্ছেন যাবতীয় তথ্য। ফিরে গিয়ে কলম নিয়ে না বসলে তার পেটের ভাত হজম যে হবে না তা বলা যায় নিঃসন্দেহে।

রাত যত ঘনো হয়ে আসে সমুদ্রের ঢেউ আরো বাড়তে থাকে। জাহাজের পিছনে গিয়ে পানির তীব্রতা দেখে চমকে উঠলাম।  আরও ঘন্টা বাদ জাহাজ থেমে রইল একদম। তার মানে আমরা আমাদের গন্তব্যে এসে পড়েছি। যেদিকে তাকিয়ে থাকি শুধু অথই জল আর ঢেউ। জ্যোৎস্নার আলোতে চিকমিক করছে যেন পুরো সমুদ্র।

রাত ভারী হয়ে এসেছে। জাহাজের ক্যাপ্টেন ঘোষণা দিল মাইকে, আগামীকাল সকাল ৬. ৩০ এ আমাদের প্রথম যাত্রা শুরু করব। কটকা জামতলা সি বিচ এর দিকে।

সহায়তা ঃ উইকিপিডিয়া, পত্রিকা, জার্নাল।

(চলবে)

Please Share This Post in Your Social Media

এই ক্যাটাগরির আরো নিউজ দেখুন..